সম্পূর্ণ মহিলাকর্মী দ্বারা পরিচালিত টেপানিয়া কৃষি মহকুমা কার্যালয়ের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, উদয়পুর, ১৭ আগস্ট।। আজকের দিনটি বিশেষ করে রাজ্যের মহিলাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের দিন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহিলাদের ক্ষমতায়নে ও স্বশক্তিকরণে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করে চলেছেন। রাজ্য সরকারও সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে মহিলাদের স্বশক্তিকরণে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে।

আজ টেপানিয়া কলোনি উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রাজ্যের প্রথম সম্পূর্ণ মহিলাকর্মী দ্বারা পরিচালিত টেপানিয়া কৃষি মহকুমা কার্যালয়ের উদ্বোধন করে একথা বলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। তিনি বলেন, ত্রিপুরাতে বর্তমানে সরকারি চাকরিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। মহিলাদের সুরক্ষার কথা ভেবে রাজ্য সরকার ১০৯ হেল্পলাইন চালু করেছে। এখন থেকে রাজ্যের সমস্ত সাধারণ ডিগ্রী কলেজে মেয়েরা বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে পারবে।

মহিলাদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করার জন্য আগরতলা শহরে ৪০০টি সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০টি সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে এই প্রথম কোন জনজাতি মহিলাকে দেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছে, যা মহিলা ক্ষমতায়নের একটা দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, ভারতবর্ষ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষকরা দেশের মেরুদন্ড। ভারতের অধিকাংশ মানুষই কৃষির সঙ্গে যুক্ত।

তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের কৃষি ব্যবস্থার মান উন্নয়নের জন্য বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করে চলেছেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যেও অধিকাংশ লোক কৃষির সঙ্গে যুক্ত। ২০১৫-১৬ সালে ত্রিপুরার কৃষকদের আয় ছিল ৬.৫৮০ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১১,০৯৬ টাকা। তিনি বলেন, রাজ্যের প্রায় ৮ লক্ষ কৃষককে ফসল বীমা যোজনার আওতায় আনা হয়েছে।

বর্তমানে রাজ্যের কৃষকদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়কমূল্যে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। কিষান ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে ২৮টি কৃষক বন্ধু কেন্দ্র চালু রয়েছে। তিনি বলেন, আনারস, কলা, আম ইত্যাদিসহ বাগিচা ফসলের চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৮,০৮৩ হেক্টর জমিকে বাগিচা ফসল চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।

এতে ৭৬ হাজার কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ আনারসকে রাজ্যিক ফল হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আর এই আনারস এখন ভারতের বাইরে দুবাই কাতার ইত্যাদি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১১ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রাজ্যের সুস্বাদু কাঠাল ইংল্যান্ড, জার্মানি দুবাই ইত্যাদি দেশেও রপ্তানি হচ্ছে। তাছাড়া লেবু, বেল, তেতুল, লংকা, পান পাতা, আদা ইত্যাদির রপ্তানিও শুরু হয়েছে, যা আগে কখনও ভাবা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ফুল চাষে রাজ্যকে আত্মনির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য ৫৭৪ হেক্টর জমিকে ফুল চাষের আওতায় আনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, কোভিড চলাকালীন সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর রিলিফ ফান্ড থেকে ৬৯৩ জন ফুলচাষীকে ২,০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ে তোলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনার মাধ্যমে ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৭০৫টি পরিবারকে ২৬ লক্ষের উপর সুপারি, পেঁপের চারা এবং উন্নতমানের বীজ প্রদান করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের কৃষকদের উৎপাদিত ফসল বিশেষ করে সব্জি যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য তিনটি হিমঘর স্থাপন করা হয়েছে। আরও ১০টি হিমঘর স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে রাজ্যে ১০ মেট্রিক টন প্যাক হাউস চালু করা হয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে উন্নত মানের মাশরুম বীজ উৎপাদনের জন্য ৮টি কেন্দ্র চালু রয়েছে।

আনারস চাষের উৎপাদনকে বৃদ্ধি করার জন্য সিপাহীজলা জেলাকে মডেল জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে কৃষি ও কৃষক কল্যাণমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় বলেন, কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে আজ। ত্রিপুরাতে এই প্রথম সম্পূর্ণ মহিলা কর্মী দ্বারা পরিচালিত টেপানিয়া কৃষি মহকুমা কার্যালয়ের পথ চলা শুরু হয়েছে। শুধু ত্রিপুরাতেই নয় ভারতবর্ষেও এটি প্রথম। এটি ত্রিপুরা রাজ্যের ৩৮তম কৃষি মহকুমা।

রাজ্যে কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ করে মহিলাদের আত্মনির্ভরতা, আত্মসম্মান, মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ চলছে। তিনি বলেন, কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পেলেই দেশের অর্থনীতি মজবুত হবে। তাই কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে রাজ্যে আরও ৫টি নতুন কৃষি মহকুমা এবং ১টি উদ্যান মহকুমা জম্পুইজলাতে খোলা হবে।

অনুষ্ঠানে জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী রামপদ জমাতিয়া বলেন, কৃষকরা হলেন অন্নদাতা। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কৃষকদের সাহায্যের জন্য পিএম কিষাণ প্রকল্প চালু করেছেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়। ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা শরদিন্দু দাস।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গোমতী জিলা পরিষদের সভাধিপতি স্বপন অধিকারী, গোমতী জেলার জেলাশাসক রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, উদয়পুর পুরপরিষদের চেয়ারপার্সন শীতল চন্দ্র মজুমদার, টেপানিয়া পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন ঝর্না রাণী দাস, পুলিশ সুপার শাশ্বত কুমার, সমাজসেবী রতন ঘোষ, অভিষেক দেবরায়, প্রবীর দাস প্রমুখ। টেপানিয়া কৃষি মহকুমা কার্যালয়ের ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *