অনলাইন ডেস্ক, ৩ মার্চ।। ইউক্রেনে হামলা চালাতে রাশিয়া কেন তাদের বিমানবাহিনীকে পুরোপুরি ব্যবহার করছে না? রহস্যটা কোথায়? রুশ বিমান বাহিনীর যা ক্ষমতা তাতে যে কোনও মুহূর্তে ইউক্রেনকে ধ্বংস করে দিতে পারে বলেই মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে বিমানবাহিনীকে পুরোপুরি ব্যবহার করা থেকে এখনও পর্যন্ত বিরত থেকেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর এখানেই রহস্য তৈরি হচ্ছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান সপ্তম দিন পার হয়ে অষ্টম দিনে পড়েছে। রুশ বিমান সেনারা ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমাবর্ষণ করছে রাজধানী কিয়েভ এবং খারকিভ-সহ ইউক্রেনের নানা প্রান্তে। কিন্তু সাত দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কেন বিমানবাহিনীকে পুরোদস্তুর কাজে লাগাচ্ছেন না পুতিন?
অন্য দিকে দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেনের বিমানবাহিনী অনেক বেশি সক্রিয়। তারা রুশ বাহিনীর হামলাকে ক্রমাগত প্রতিরোধ করে যাচ্ছে। যেখানে ইউক্রেন বিমানবাহিনীকে পুরোদস্তুর কাজে লাগাচ্ছে, রাশিয়া এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে কেন?
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া এখনও পর্যন্ত তার পুরো সামরিক শক্তি কাজে লাগায়নি। কারণ রাশিয়া সময় নিচ্ছে। তারা চাইছে শহরগুলো থেকে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাক। কিংবা শহর খালি করে দিক। সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে যাতে হতাহতের সংখ্যা না বাড়ে, তাই বিমান হামলার তেজ কম রেখে ইউক্রেনবাসীদের সময় দিতে চাইছে।
তা ছাড়া এই যুদ্ধে রাশিয়ারও কম ক্ষতি হচ্ছে না। বহু সৈনিকের মৃত্যু হচ্ছে। এ দিকটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে পুতিনকে। যদি বিপুল সংখ্যক সেনার মৃত্যু হয়, তা হলে নিজের ঘরেও ক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন পুতিন। যা তিনি চাইছেন না। আর তাই হামলার গতি কমিয়ে রণকৌশল বদলানোর চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে রাশিয়া।
হামলার পাশাপাশি সৈনিকদের নিরাপত্তার উপরও জোর দিতে হচ্ছে রাশিয়াকে। আর সে কারণেই কিয়েভ দখল করার উদ্দেশে রওনা হওয়া ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সেনা বহরের গতি যেন আচমকাই শ্লথ করে দেওয়া হয়েছে। কিয়েভ এবং খারকিভে যে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে রুশ বাহিনীকে, যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ধীরে খেলার কৌশল নিচ্ছে তারা।
ইউক্রেন ইতিমধ্যেই দাবি করেছে তাদের হামলায় প্রায় ছয় হাজার রুশ সেনার মৃত্যু হয়েছে। যদিও রাশিয়া তা অস্বীকার করেছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওলেক্সি রেজিঙ্কো বলেন, ‘এর থেকে স্পষ্ট যে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে শত্রুপক্ষ অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে। তাদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। তাই হতাশায় সাধারণ নাগরিকের উপর হামলা চালাচ্ছে’।
ইউক্রেনে রাশিয়ার অত্যন্ত বিপজ্জনক সামরিক উপস্থিতির চিত্র দেখা গেছে স্যাটেলাইটে। ৪০ মাইলের দীর্ঘ একটি সামরিক বহর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উত্তর দিক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে।
যে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে রাশিয়া তড়িৎগতিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেছে, সেটি এখন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে।
তার মাঝে নতুন করে শত শত সামরিক যান নিয়ে কিয়েভের দিকে রুশ সৈন্যদের এই বহর নিয়েও নানা ধরনের গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, রাশিয়া হয়তো তার আগ্রাসনের কৌশল পাল্টে ফেলেছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যে সামরিক বহর কিয়েভের দিকে এগোচ্ছে, তাতে সামরিক রসদ সরবরাহ ও সাঁজোয়া যান রয়েছে। রাজধানী ঘেরাও এবং পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা অথবা পুরোমাত্রার আক্রমণ চালানোর জন্য এই সামরিক বহর ব্যবহার করা হতে পারে।
লন্ডনের শীর্ষস্থানীয় পলিসি ইনস্টিটিউট চ্যাথাম হাউসের রুশ যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ ম্যাথিউ বুলেগু নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, আমরা যা দেখছি তা মূলত দ্বিতীয় ধাপের কৌশল। এটি অত্যন্ত নৃশংস এবং অনিয়ন্ত্রিত যুদ্ধের দিকে গতি বদল। যা ইউক্রেনে পুরো পরিস্থিতিকে অনেক বেসামরিক হতাহত এবং রক্তাক্ত যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে।
রাশিয়ার ওই সামরিক বহরের যথাযথ উদ্দেশ্য সম্পর্কে আগাম ধারণা করা কঠিন বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, কিয়েভকে দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর জন্যও ওই বহরকে ব্যবহার করা হতে পারে। রাশিয়া প্রাথমিক কৌশল শেষে দ্বিতীয় স্তরের কৌশলে প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রাথমিক কৌশল অনুযায়ী, ক্রেমলিনের নেতারা ভুলভাবে ধরে নিয়েছিলেন যে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী অত্যন্ত দক্ষ রুশ সামরিক বাহিনীর সাথে লড়াইয়ে দ্রুত পরাজয়ের সম্মুখীন হবে। এছাড়া বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা বা লড়াই ছাড়াই রাশিয়ার সৈন্যরা দ্রুত বড় বড় শহরগুলো দখল করতে পারবে। কিন্তু ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী এবং হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়া নাগরিকদের কঠোর প্রতিরোধের মুখে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অভিযান। কিন্তু এরপরও বিমান বাহিনীকে পুরোপুরি ব্যবহার করছে না রাশিয়া।