অনলাইন ডেস্ক, ২০ মে।। ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের বিচারের মুখোমুখি হওয়া প্রথম রুশ সেনা তার অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি আদালতে ‘ক্ষমা’ চান তিনি।
এসময় ইউক্রেনে আক্রমণের প্রথম দিকে তিনি কীভাবে ওলেক্সান্দার শেলিপভ নামের একজন ইউক্রেনীয় বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছিলেন তার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন।
সার্জেন্ট ভাদিম শিশিমারিন নামের ২১ বছর বয়সী ওই রুশ সেনা আদালতে তার হাতে নিহত ৬২ বছর বয়সী সেই বেসামরিক ইউক্রেনীয় নাগরিকের বিধবা স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি জানি যে, আপনি আমাকে ক্ষমা করতে পারবেন না, কিন্তু তবুও আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই’।
গতকাল বুধবার তাকে প্রথম আদালতে তোলা হয়েছিল। সেসময় তার হাতে নিহত সেই ব্যক্তির বিধবা স্ত্রী ক্যাটেরিনাও আদালতে হাজির ছিলেন। ক্যাটেরিনা তার স্বামীর হত্যাকারীকে দেখেই কেঁদে উঠেন। এরপর এই রুশ সেনা আদালতে তার অপরাধ স্বীকার করে নেন।
গতকাল শুনানি শেষে ওলেক্সান্দার শেলিপভের বিধবা স্ত্রী ক্যাটেরিনা বিবিসিকে বলেন, ‘আমি তার জন্য খুব দুঃখিত বোধ করছি। কিন্তু এমন অপরাধের জন্য আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি না’।
আজ বৃহস্পতিবার ফের আদালতে রুশ সেনা শিশিমারিনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের শুনানি হয়েছে। সেসময়ই এই রুশ সেনা স্বামী হারানো ক্যাটেরিনার কাছে ক্ষমা চেয়ছেন।
বিচারকরা বলেন, শিশিমারিন রাশিয়ান বাহিনীর একটি ট্যাঙ্ক ডিভিশনের একটি ইউনিটের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সেসময়ই তার বহরে হামলা চালায় ইউক্রেনীয় সেনারা। তিনি এবং অন্য চারজন রুশ সেনা একটি গাড়ি চুরি করে পালাচ্ছিলেন এবং চুপাখিভকা এলাকার ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় তারা একটি সাইকেলে ৬২ বছর বয়সী সেই ইউক্রেনীয় ব্যক্তিকে দেখতে পেয়ে হত্যা করেন।
ইউক্রেন এ পর্যন্ত রাশিয়ান সেনাদের হাতে সংঘটিত ১০ হাজারেরও বেশি সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের ঘটনা চিহ্নিত করেছে।
দেশটির প্রধান প্রসিকিউটর ইরিনা ভেনেডিক্টোভা টুইট করেছেন, ‘এই প্রথম বিচারের মাধ্যমে আমরা একটি স্পষ্ট সংকেত পাঠাচ্ছি যে, প্রত্যেক অপরাধী, প্রত্যেক ব্যক্তি, যারা ইউক্রেনে অপরাধের আদেশ দিয়েছে বা সহায়তা করেছে তারা কেউ দায় এড়াতে পারবে না’।
তবে রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রাশিয়ার দাবি, তারা ইউক্রেনের কোনো বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেনি।
তদন্তকারীরা অবশ্য ইতিমধ্যেই রাশিয়ান সেনাদের যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ করা শুরু করেছে। এসব প্রমাণ তারা নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কাছে উপস্থাপন করবে।
আইসিসিও ইউক্রেনে তাদের ৪২ জন তদন্তকারী, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং সহায়তা কর্মীদের একটি দলকে পাঠাচ্ছে।
ইতিমধ্যে, ইউক্রেনও ভবিষ্যতে বিচারের জন্য রুশ সেনাদের যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে একটি দল গঠন করেছে।