জীবন্ত কবর দেওয়ার পরও এক ইউক্রেনীয় নাগরিকের বেঁচে থাকার রোমহর্ষক গল্প

অনলাইন ডেস্ক, ১৯ মে ।। রুশ সেনারা গুলি করে জীবন্ত কবর দেওয়ার পর নিজের বেঁচে থাকার রোমহর্ষক গল্প বলেছেন মাইকোলা কুলিচেঙ্কো নামের এক ইউক্রেনীয় নাগরিক। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন-এর সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি জানান, জ্ঞান হারানো পর্যন্ত তাদের তিন ভাইকে নির্যাতন করে রুশ বাহিনী।

মাইকোলা কুলিচেঙ্কো বলেন, তিনি এবং তার দুই ভাই- ইয়েভেন ও দিমিত্রোকে রাশিয়ান সেনারা গুলি করে কবর দিয়েছিল। রাশিয়া তাদের দেশে আক্রমণ করার সাড়ে তিন সপ্তাহ পরে ওই ঘটনা ঘটে। ৩৩ বছর বয়সী কুলিচেঙ্কো বলেন, রাশিয়ান সেনাদের ওপর বোমা হামলার জন্য দায়ী ইউক্রেনীয়দের সন্ধানের সময় ১৮ মার্চ রাশিয়ান সেনারা তাদের বাড়িতে আসে।

কুলিচেঙ্কো বলেন, রাশিয়ান সেনারা বাড়িতে তল্লাশি চালাতে এসে তাদেরকে বাড়ির উঠোনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করে। একপর্যায়ে রুশ সেনারা তাদের দাদার কিছু সামরিক মেডেল এবং তার ভাই ইয়েভেনের একটি সামরিক ব্যাগ খুঁজে পায়। তার ভাই ইয়েভেন ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর একজন প্যারাট্রুপার ছিলেন। এতেই রুশ সেনাদের সন্দেহ বেড়ে যায়।

এরপর তাদের তিন ভাইকে একটি বাড়ির বেজমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদেরকে তিন দিন আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কুলিচেঙ্কো বলেন, চতুর্থ দিনে তিনি আশা করেছিলেন যে, রাশিয়ান সেনারা তাদের ছেড়ে দেবে। কিন্তু তারা তাকে একটি ধাতব রড দিয়ে মারধর করে এবং তার মুখের মধ্যে একটি বন্দুকের ব্যারেল ঢুকিয়ে দেয়। জ্ঞান না হারানো পর্যন্ত তাকে এবং তার ভাইদেরও নির্যাতন করা হয়।

এরপর তাদের তিনজনকে চোখ এবং হাত-পা বেঁধে একটি সামরিক গাড়িতে তুলে এক নির্জন জমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের চোখ বেঁধে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রেখে পাশেই একটি গর্ত খনন করা হয়।

প্রথমে তার বড় ভাই দিমিত্রোকে, এরপর তার মেঝো ভাই ইয়েভেনকে এবং সবশেষে তাকে গুলি করা হয়। তবে ভাগ্যক্রমে গুলিটি তার গালে লাগে এবং তার ডান কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এই সুযোগে তিনি মারা যাওয়ার অভিনয় করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকেই সবার আগে কবরে ফেলা হয়।

রাশিয়ান সেনারা তাদের তিনজনকেই মৃত ভেবে কবর দিয়ে চলে যায়। কুলিচেঙ্কো বলেন, তিনি ঠিক জানেন না কতক্ষণ তিনি মাটির নিচে ছিলেন। তবে তিনি একসময় তার ওপর থেকে ভাইদের লাশ সরিয়ে কবর থেকে বেরিয়ে আসেন।

কুলিচেঙ্কো বলেন যে, কবর থেকে বেরিয়ে ফসলের ক্ষেতের মধ্য দিয়ে কাছের একটি বাড়িতে গিয়ে উঠেন। সেখানে এক নারী তাকে আশ্রয় দেন এবং সারারাত ধরে তার সেবা করেন। পরদিন সকালে তিনি তারা বাবার বাড়িতে বোনের কাছে ফিরে যান। বোন তাদের জন্য কয়েকদিন ধরে উদ্বিগ্নভাবে অপেক্ষা করছিলেন।

কুলিচেঙ্কো বলেন, ‘আমি ভাগ্যবান ছিলাম… এবং এখন আমাকে শুধু বেঁচে থাকতে হবে। এই গল্পটি শুধু ইউক্রেনে নয়, সারা বিশ্বের সবার শোনা দরকার। কারণ এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে এবং একশকোটি মানুষের মধ্যে এমন ঘটনা মাত্র একটি’।

সিএনএন জানিয়েছে, এপ্রিলের শুরুতে চেরনিহিভ অঞ্চল থেকে রাশিয়ান সেনারা সরে যাওয়ার পর কুলিচেঙ্কোর গল্প প্রকাশ্যে আসে। তার ভাই দিমিত্রো এবং ইয়েভেনকে পরে যথাযথভাবে কবর দেওয়া হয়। তাদেরকে একটি সুসজ্জিত কবরে সমাধিস্থ করা হয়।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *