আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য মানববোমা হিসেবে কাজে লাগানো হয়েছিল এক উচ্চশিক্ষিত নারী কে

অনলাইন ডেস্ক, ২৮এপ্রিল।। মঙ্গলবার দুপুরে জোরালো বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। আত্মঘাতী বোমা হামলায় একটি গাড়িতে থাকা তিন চীনা নাগরিক-সহ চার জন নিহত হন। হামলার দায় স্বীকার করে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)।

বিএলএ এক বিবৃতিতে জানায়, আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য মানববোমা হিসেবে কাজে লাগানো হয়েছিল শারি বালোচ ওরফে ব্রামশকে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বোরখা পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের মুখে দাঁড়িয়ে এক নারী। চীনা নাগরিকদের নিয়ে সাদা রঙের একটি ভ্যান বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে যাওয়ার মুহূর্তে বিস্ফোরণ ঘটে।

৩০ বছর বয়সী শারি দুই সন্তানের মা। আত্মঘাতী হামলার দশ ঘণ্টা আগে নিজের টুইটার হ্যান্ডলে লিখেছিলেন, ‘গুড বাই’।

বেলুচিস্তানের তুরবাতের নিয়াজার আবাদের বাসিন্দা শারি প্রাণীবিদ্যায় স্নাতকোত্তর করেছেন বেলুচিস্তান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এমফিল করেছেন আলামা ইকবাল মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

২০১৪ সালে বিএড করেন শারি। ২০১৮ সালে এমএড। বেলুচিস্তানের কেচ জেলায় একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করছিলেন। শারি বিয়ে করেছিলেন এক দাঁতের চিকিৎসককে। তাদের এক ছেলে, এক মেয়ে। এক জনের বয়স আট, অন্য জনের পাঁচ।

শারির বাবা একটি সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা ছিলেন। তিন বছর জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন শারির বাবা। শারির দেবর কলেজের অধ্যাপক। তার চাচা একজন লেখক, অধ্যাপক এবং মানবাধিকার কর্মী। শারির বাপের বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ি দুই কুলই উচ্চশিক্ষিত।

ছাত্রাবস্থায় বেলুচ স্টুডেন্টস’ অর্গানাইজেশন-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শারি। বছর দুয়েক আগে সংগঠনের আত্মঘাতী স্কোয়াড মজিদ ব্রিগেডে যোগ দিয়েছিলেন।

শারির দুই সন্তানের কথা ভেবে তাকে অন্য কোনও স্কোয়াড বেছে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বিএলএ-র তরফে। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। বরং আত্মঘাতী স্কোয়াডেই যে তিনি যোগ দিতে চান, সে কথা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জানিয়েছিলেন।

বিএলএ-র আত্মঘাতী স্কোয়াড মজিদ ব্রিগেডের নিয়ম অনুযায়ী শারিকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল।

ফলে গত দুবছর ধরে মজিদ ব্রিগেডের বিভিন্ন শাখার সঙ্গে কাজ করেন শারি। এই সময়ের মধ্যে আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন।

ছয় মাস আগে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে শারি জানান, আত্মঘাতী হামলার জন্য তিনি পুরোপুরি প্রস্তুত। তার পরই তাকে সরাসরি আত্মঘাতী স্কোয়াডের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা পর বিএলএ এক বিবৃতি জারি করে জানায়, ‘মজিদ ব্রিগেডের আত্মঘাতি শারি বালোচ ওরফে ব্রামশ তার দায়িত্ব সফল ভাবে পালন করেছেন’।

বিএলএ মুখপাত্র জিয়ান্দ বালুচ বলেন, ‘বেলুচিস্তানে চীনের প্রত্যক্ষ এবং অপ্রত্যক্ষ কোনও উপস্থিতিই সহ্য করব না আমরা। বেলুচিস্তান থেকে দূরে থাকার জন্য বার বার সতর্ক হয়েছিল চীনকে’।

এর পরই জিয়ান্দ হুঁশিয়ারি দেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে বেলুচিস্তানে গণহত্যা চালানোতে মদত জোগাচ্ছে চীন। শুধু তাই নয়, চীন বেলুচিস্তানে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। তাদের এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবে না বিএলএ।

হামলার পর শারির স্বামী হাবিতান বশির বালুচ টুইট করেন, ‘শারি জান, তোমার এই কাজের জন্য আমি গর্ববোধ করছি। তুমি মারোচ এবং মীর হাসানের গর্ব। আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে থাকবে তুমি’।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *