ভারতে ১০০ কোটি পাউন্ডের বিনিয়োগ করতে চায় যুক্তরাজ্য সরকার

অনলাইন ডেস্ক,২২ এপ্রিল।। দুই দিনের সফরে ভারতে এসেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে পৌঁছান তিনি। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল এবং রাজ্যপাল আচার্য দেবব্রত।

বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে হোটেলে যান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর তিনি মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি-বিজড়িত সবরমতী আশ্রমে যান। সবরমতীতে গিয়ে আবেগাপ্লুত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ভিজিটরস ডায়েরিতে লেখেন, ‘এই অসাধারণ মানুষটির আশ্রমে আসতে পারা এক বিরাট সৌভাগ্য’। গান্ধী আশ্রমে এ সময় বরিস জনসনকে ভারতের ঐতিহ্যবাহী চরকা ঘোরাতে দেখা যায়।

ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতে ১০০ কোটি পাউন্ডের বিনিয়োগ করতে চায় যুক্তরাজ্য সরকার। এছাড়া শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন জনসন। তার এই ভারত সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো ভারত ও ব্রিটেনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং গুজরাতি শিল্পপতিদের কাছ থেকে ব্রিটেনে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি আদায় করা।

বরিস আশা করছেন যে, গুজরাটি শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক বা সাবরমতী আশ্রমে তার সফর ব্রিটেনে বসবাসকারী গুজরাটিদের মন গলাতে সাহায্য করবে। ব্রিটেনে বসবাসকারী ভারতীয়দের ৫০ শতাংশই গুজরাটি বংশোদ্ভূত।

বৃহস্পতিবার ভারতে অবস্থিত ব্রিটিশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া একটি বিবৃতিতে ঘোষণা করা হয়, ‘ব্রিটেন ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ১০০ কোটি পাউন্ডেরও বেশি বিনিয়োগ করা হবে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়রিং, স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই বিনিয়োগ করা হবে। এর ফলে প্রায় ১১ হাজার কর্মসংস্থান হবে’।

দিল্লির ব্রিটিশ হাইকমিশন আরও জানিয়েছে, ভারত-ব্রিটেনের মধ্যে বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে আজ।

ব্রিটেনের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গুজরাটের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগ কাজ করছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন সেখানেও যাবেন।

এছাড়া ব্রিটিশ উদ্যোগে তৈরি হওয়া একটি কারখানার উদ্বোধনেও অংশগ্রহণ করবেন তিনি। একইসঙ্গে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সংক্রান্ত বিষয়ে ভারত- ব্রিটেনের নতুন সহযোগিতার কথাও ঘোষণা করবেন তিনি।

আগামীকাল বরিস যাবেন দিল্লিতে। ২২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তার একান্ত বৈঠক হওয়ার কথা। ব্রেক্সিটের পরে বাণিজ্য-বন্ধু হিসেবে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকাকে ইউরোপের বিকল্প ভাবছে ব্রিটেন। সেই লক্ষ্যেই দ্রুত ভারতের সঙ্গে একটি বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়িত করতে চান বরিস। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যনীতির পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ব্রিটেন এখন ভারতের সঙ্গে নতুন বাণিজ্যনীতি করতে খুবই আগ্রহী। ২০৩৫-এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য দুগুণ বাড়িয়ে বছরে ২ হাজার ৮০০ কোটি পাউন্ড করাই লক্ষ্য জনসন প্রশাসনের।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে রাশিয়া নিয়ে ব্রিটেন-সহ পশ্চিমা দুনিয়া যে অবস্থান নিয়েছে, সে বিষয়টি নিয়েও প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কথা বলবেন জনসন। ভারত সফরে আসার আগে লন্ডনে সাংবাদিকদের বরিস বলেন, ‘একটি স্বেচ্ছাচারী দেশের প্রতাপে যে ভাবে গোটা বিশ্বের শান্তি ও সুস্থিতি বিঘ্নিত হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের সরব হতেই হবে। এবং এই কাজে শক্তিশালী গণতন্ত্রগুলো যাতে হাত মেলায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ভারত পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ গণতন্ত্র এবং অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতি। আমরা আশা করি, এই অস্থির সময়ে ভারত আমাদের পাশে থাকবে’।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *