যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্ক, ২০ এপ্রিল।। রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। ইউক্রেনকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলে সাহায্য অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। ইউক্রেনকে ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তবে এতে দেশটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র হিসেবে পরিচিত সংবাদপত্র পিপলস ডেইলির পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি দৈনিক ট্যাবলয়েড সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস এর একটি মতামত কলামে এই দাবি করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ যখন থামার পথে তখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভিয়ান ও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। সুলিভিয়ান বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনে মধ্যে চলমান যুদ্ধ কয়েক মাস বা তার বেশি দীর্ঘ হতে পারে। ব্লিঙ্কেন ও নেড প্রাইস বলেছেন, দেশ দুইটির মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে তা ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

এর আগে পূর্বাভাস দেওয়া হয় যুদ্ধ চলতি বছরের মে মাসে থামতে পারে। তবে এ ধারণা থেকে সরে এসে বলা হচ্ছে যুদ্ধের সময় আরও বাড়বে।

এদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ ৫০ দিন পার হয়ে গেছে। ফলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে ইউক্রেনকে কীভাবে উদ্ধার করা হচ্ছে।

আসলে যুক্তরাষ্ট্র এমন পরিস্থিতিই চাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হচ্ছে শান্তি আলোচনা ও সংঘাতকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থ উদ্ধার করা। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ আটটি অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছে পেন্টাগন। অস্ত্রের উৎপাদন বাড়তে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। এসব অস্ত্র কোম্পানিগুলোর শেয়ার বড় উত্থানের পথে রয়েছে। যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করে সুবিধা নিতে চায় দেশটির অস্ত্র কোম্পানিগুলো। তাছাড়াও রাশিয়ার হুমকি তত্ত্বকে সামনে এনে ন্যাটোর সম্প্রসারণের মাধ্যমে ফায়দা নিতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি সংঘাত মানে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যা আমাদের প্রতিরোধ করা উচিত। এসব কথার মাধ্যমে সংঘাতকে আরও উসকে দেওয়া হচ্ছে। যুদ্ধ শুরুর কয়েক দিনের মধ্যে শান্তি আলোচনার বৈঠকে বসে রাশিয়া-ইউক্রেন। কয়েক দফায় শান্তি আলোচনা করে দেশ দুইটি। পঞ্চম বৈঠকের সময়ও তারা ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

তবে হঠাৎ ন্যাটোতে যোগ দেওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ইউক্রেন। এরপরই আলোচনার ক্ষেত্রে অচলাবস্থা তৈরি হয়। যেহেতু আলোচনার বিষয়গুলো ওয়াশিংটনের চাহিদা মতো হয়নি। তাই আলোচনা যাতে না চলে সে পদক্ষেপ নেয় দেশটি।

ইউক্রেন সংকটের পর নতুন স্নায়ু যুদ্ধের আশঙ্কা নিয়ে শঙ্কিত হয় বিশ্ববাসী। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি নতুন স্নায়ু যুদ্ধের চেয়েও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। কারণ স্নায়ু যুদ্ধের সময় দুই শিবিরই সমঝোতার মাধ্যমে একটি নিরাপত্তা চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। তবে এখন রাশিয়াকে দমন করতে যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিচ্ছে তা খুবই ভয়ঙ্কর। ইউক্রেনের শান্তি আলোচনা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্ব নেই।

এমন পরিস্থিতি বোঝা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক ক্ষুধা আরও বেড়েছে অর্থাৎ দেশটি ভূরাজনীতিতে বেশি নজর দিচ্ছে। দেশটি ও তার মিত্ররা রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে নতুন বিশ্ব তৈরি করতে চায়। নিরাপত্তার কথা বলে ইউরোপের নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে পরিচিত সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকেও ন্যাটোতে যুক্ত করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এমন আচরণ বন্ধ না করলে কঠিন ফলাফল ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে।

সবচেয়ে বিপজ্জনক কথা হলো যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকেও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানাচ্ছে। রাশিয়া -ইউক্রেন সংঘাতকে ইন্দো-প্যাসিফিক পরিস্থিতির সঙ্গে মেলাতে চাইছে। ধীরে ধীরে ন্যাটোকে পূর্বমুখী করা হচ্ছে। প্রথমবারের মতো ন্যাটোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকেও আমন্ত্রণ জানায় যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া জাপানকে অকাশমুখী করে তাইওয়ান ইস্যুতে পরিস্থিতি জটিল করতে চায় দেশটি। তাই ভূরাজনীতিতে জড়িয়ে পরিস্থিতির চরম অবনতি করছে যুক্তরাষ্ট্র।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *