ইউক্রেনের জন্য আরো সামরিক সহায়তার তোড়জোড় করছে ইইউ

অনলাইন ডেস্ক, ১২ এপ্রিল।। রাশিয়ার হামলার মুখে আত্মরক্ষার অধিকার মেনে নিয়ে ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেনকে সামরিক সরঞ্জাম ও কৌশলগত সহায়তা করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যায়ে এক তহবিল থেকে সেই লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তাও করা হচ্ছে।

কিন্তু এখন পর্যন্ত মূলত ‘আত্মরক্ষামূলক’ অস্ত্র ও সরঞ্জামের মধ্যেই সেই সহায়তা সীমাবদ্ধ থেকেছে। রাশিয়াকে না চটিয়ে যুদ্ধের সীমারেখা ইউক্রেনের মধ্যেই আবদ্ধ রাখার চেষ্টা করে এসেছে ইইউ তথা ন্যাটো।

কিন্তু নিরীহ মানুষের উপর রুশ সেনাবাহিনীর নৃশংস হামলার একের পর এক দৃষ্টান্ত সামনে আসার পর গোটা বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। সোমবার ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে ইউক্রেনের জন্য আরো বড় মাত্রার সামরিক সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ সেনাবাহিনীর বাড়তি তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে নিরীহ মানুষের ওপর আরো নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের আশঙ্কা বাড়ছে। ফলে রাশিয়ার ওপর আরো কড়া নিষেধাজ্ঞার বদলে ইউক্রেনকে এমন হামলা প্রতিহত করতে দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ইইউ-র পররাষ্ট্র বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা জোসেপ বরেল।

তার মতে, মস্কোর ওপর যতই নিষেধাজ্ঞা চাপানো হোক না কেন, ডনবাস অঞ্চলে আরো উত্তেজনা অবশ্যম্ভাবী। তাই ইউক্রেনের জন্য আরো ৫০ কোটি ইউরো মূল্যের সামরিক সহায়তার তোড়জোড় করছে ইইউ। সদস্য দেশগুলোর সম্মতি পেলেই সে দেশকে আরও অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো হবে বলে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, এর আগে ইইউ-র বাইরের কোনো দেশকে এভাবে সামরিক সহায়তা দেওয়া হয়নি।

ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র পাঠানো থেকে শুরু করে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করার প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।

জার্মানির মতো কিছু দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির উপর নির্ভরশীলতা দ্রুত কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করলেও অবিলম্বে পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস আমদানি বন্ধ করতে নারাজ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক এ ক্ষেত্রে আরো সমন্বয়ের পক্ষে ওকালতি করেন।

তার মতে, জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির উপর নির্ভরতা পুরোপুরি কাটিয়ে তুলতে ইউরোপকে সংঘবদ্ধ হতে হবে।

বেয়ারবক অবশ্য ইউক্রেনের জন্য আরও বড় অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের পক্ষে কথা বলেন। ট্যাংক, বোমারু বিমান, রণতরির মতো আক্রমণাত্মক সরঞ্জামও পাঠানো প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। জার্মানির ‘রাইনমেটাল’ নামের অস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানি অবিলম্বে ৫০টি ট্যাংক সরবরাহ করতে পারে বলে জানিয়েছে।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস অবশ্য এ ক্ষেত্রেও জাতীয় স্তরে উদ্যোগের বদলে ইইউ পর্যায়ে সমন্বয়ের পক্ষে। তিনি বলেন, জার্মানি ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করে চলেছে, ভবিষ্যতেও করবে। সবকিছু বিবেচনা করে সতর্কতার সঙ্গে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে শলৎস মনে করেন।

ওদিকে, রাশিয়া পশ্চিমা জগতকে বারবার সতর্ক করে দিয়ে বলে আসছে যে, ইউক্রেনকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করলে সেই আচরণকে যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। এমন সরঞ্জামের ওপর হামলাও চালিয়েছে রুশ সেনারা।

তবে রাশিয়া এখনো ইউক্রেনের বাইরে অন্য কোনো দেশের ওপর এমন হামলা চালায়নি। ইউক্রেনকে আক্রমণাত্মক অস্ত্র সরবরাহ করলে অন্য দেশেও হামলা চালানোর সেই ‘রেড লাইন’ বা চরম সীমা রাশিয়া অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *