পুতিনকে অপসারণ করার কথা ভাবছে রাশিয়ার অভিজাতরা

অনলাইন ডেস্ক, ২২ মার্চ ।। রাশিয়ার শীর্ষ ধনী এবং অভিজাত শ্রেণির কয়েকজন নাকি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ক্ষমতাচ্যূত করার পরিকল্পনা করছেন এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে ‘অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনঃউদ্ধারের’ চেষ্টা করছেন। এমনকি তারা নাকি পরবর্তী রুশ প্রেসিডেন্ট কে হবেন তাও চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য মিরর গত রবিবার (২০ মার্চ) এমন খবর প্রকাশ করেছে।

নিউইয়র্ক পোস্ট বলেছে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান গোয়েন্দা অধিদপ্তর রবিবার এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে, বিষ, আকস্মিক অসুস্থতা, দুর্ঘটনা- রাশিয়ার অভিজাতরা পুতিনকে অপসারণ করার কথা ভাবছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা প্রধান দাবি করেছেন, রাশিয়ার একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি রুশ প্রেসিডেন্টকে বিষপ্রয়োগে হত্যার পরিকল্পনা করছে। নীতিগতভাবে তারা রুশ প্রেসিডেন্টের বিরোধী। প্রভাবশালী ওই রুশ এলিটরা রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী ও অভিজাত শ্রেণির একাংশকে একত্রিত করার কাজও শুরু করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে হত্যার চক্রান্ত করা ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। তাদের লক্ষ্য, ভ্লাদিমির পুতিনকে রুশ প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে অন্য কোনো ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট পদে নিয়ে আসা। কারণ পুতিনকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরানো গেলেই কেবল পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার ব্যবসায়িক সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পথও সুদৃঢ় হবে।

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটি নিয়েও এই দলটি হতাশা প্রকাশ করেছে। তারা এই অবস্থা থেকে বের হতে চাইছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা বিভাগ।

ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা বিভাগ আরও জানিয়েছে, ‘রাশিয়ার রাজনৈতিক অভিজাত সম্প্রদায়ের একাংশ পুতিনের উত্তরসুরি হিসেবে ওলেক্সান্দ্র (অ্যালেক্সান্ডার) বর্তনিকোভের নামকে প্রধান্য দিচ্ছে। তিনি বর্তমানে রাশিয়ার সরকারি সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন এবং পুতিনের পক্ষেই কাজ করছেন’।

ওলেক্সান্দ্র বর্তনিকোভ ও তার দপ্তরই ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ক্ষমতাকে বিশ্লেষণ করেছিলেন। এখন বর্তনিকোভ ও তার সহযোগী রুশ অভিজাতরা পুতিনকে সরাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা করছেন।

পুতিনকে সরাতে তাদের হাতে বেশ কিছু বিকল্প রয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিষ খাইয়ে অথবা কোনো দুর্ঘটনা দেখিয়ে বা অন্য কোনো ভাবে পুতিনকে হত্যা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের গোয়েন্দা বিভাগ।

অবশ্য প্রেসিডেন্ট পুতিনের স্থলাভিষিক্ত করার জন্য ওলেক্সান্দ্র বর্তনিকোভকে সামনে নিয়ে আসার বিষয়টি বিস্ময়কর। কারণ পুতিন ও বর্তনিকোভ উভয়েই লেনিনগ্রাদে সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে কাজ করেছিলেন। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনের পক্ষেই কাজ করছেন বর্তনিকোভ।

ইউক্রেন গোয়েন্দা অধিদপ্তরের দাবি, পুতিনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনে ধীরগতিতে এবং ব্যয়বহুলভাবে হামলা চালানোর অভিযোগ তুলেছেন বর্তনিকভ। একই সঙ্গে পুতিন ‘মারাত্মক ভুল হিসাব’ কষেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। এই কারণে পুতিনের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে বলে ইউক্রেনের গোয়েন্দা অধিদপ্তরের দাবি করেছে।

ডেইলি মিরর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর গত ২৫ দিনে দেশটিতে প্রায় ১৫ হাজার সেনা হারিয়েছে রাশিয়া। এর জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিন রুশ সামরিক বাহিনীর ৮ জন জেনারেলকে বরখাস্ত করেছেন।

প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম রাশিয়ার মানুষদের প্রতি পুতিনকে গুপ্তহত্যা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার আগে ক্যালিফোর্নিয়ার একজন ব্যবসায়ীও তার লিঙ্কডইন পেজে পুতিনের ছবি পোস্ট করে তাকে হত্যার জন্য ১০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *