কুমারঘাট, ২০ ডিসেম্বর : কালের বিবর্তনে উন্নতি ঘটছে প্রযুক্তির। কিন্তু একাংশ মানুষের মধ্যে কুসংষ্কার এখনো এমন ভাবে বিরজমান যা অনেক ক্ষেত্রেই কেড়ে নিচ্ছে মানুষের জীবনকেও। আবারো কুসংস্কারের কোপে পড়ে প্রাণ হারাল চার বছরের শিশুপুত্র। হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে ঊনকোটি জেলার কুমারঘাট থানাধীন আশ্রমপল্লী গ্রামে। মৃত শিশুর নাম পিয়ুষ মালাকার। শিশুর মৃত্যুর জন্য এলাকার কালীসাধক তথা কবিরাজ হিসেবে পরিচিত অঞ্জলী মালাকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন মৃত শিশুর পরিবার।
মৃত শিশুর বাবা রূপক মালাকার জানিয়েছেন, গত সোমবার সকালে তার চার বছরের শিশুটি হঠাৎই বাড়ীতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে প্রথমে কুমারঘাট এবং পরে কৈলাসহর হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবারের লোকেরা। কিন্তু দুই হাসপাতাল ঘুরেও তার জ্ঞান না ফেরায় তাকে আগরতলার জিবি হাসপাতালে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। সঙ্গে সঙ্গেই পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে রওনা দেয় আগরতলার উদ্দেশ্যে। এরই মাঝে তন্ত্রে মন্ত্রে বিশ্বাসী শিশুটির বাবা-মা ছুটে যান এলাকারই কালী সাধক তথা কবিরাজ বলে পরিচিত অঞ্জলী মালাকার নামে এক মহিলার কাছে। সেখানে গিয়ে ধর্ম আর দেবতার উপর আস্থা রেখে ছেলের সুস্থতা কামনা করে পূজার্চনা শুরু করেন ছেলের বাবা-মা।
তাদের দাবি তখনই দেবতার কথিত কালী সাধকের মেয়ে তাদের উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করে শিশুটিকে দেবতার কাছে তুলে দেওয়ার জন্য। শুধু তাই নয় নানাভাবে তাদের মনকে প্রভাবিত করতেও খামতি রাখেনি কালী সাধক এবং তার মেয়ে। পরে বাধ্য হয়ে তারা আগরতলার কাছাকাছি পৌঁছেও শিশুটিকে অজ্ঞান অবস্থায় আবার বাড়ীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে এবং কবিরাজের শরণাপন্ন হয়। পরবর্তীতে ঐ কবিরাজ শিশুটিকে তন্ত্রমন্ত্র এবং ঝাড় ফু করে বাড়ী পাঠিয়ে দিলে তার জ্ঞান কিছুতেই না ফেরায় তারা আবারো শিশুটিকে নিয়ে কবিরাজের দরজায় ছুটে গিয়ে সেখানে তন্ত্রমন্ত্র চালাতে থাকে। এই অবস্থায় ভোররাতে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরে শিশুটি। এই ঘটনায় শিশুর পিতা সরাসরি অভিযোগ করেছেন ঐ কবিরাজের কারণেই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। মহিলার শাস্তির দাবি করেছেন পুত্রহারা পিতা।
এদিকে তাদের অভিযোগকে মিথ্যে এবং ষড়যন্ত্র বলে দাবি করলেন কালী সাধক মহিলা। তার দাবি শিশুটির অজ্ঞান হওয়ার পর থেকেই তাদের বাড়িতে দৌড়ঝাপ শুরু করেন শিশুর পরিবারের লোকেরা। তারা শিশুটিকে সুস্থ করে তুলতে কবিরাজের কাছে রিতিমতো প্রাণ ভিক্ষা চাইতে শুরু করেন বলে পাল্টা অভিযোগ করলেন কালী সাধক। তিনি দাবি করেছেন কালী মা নাকি তার মেয়ের উপর ভর করে তার মাধ্যমে বলে দিয়েছে শিশুটিকে সম্ভব হলে তাদের কাছে নিয়ে আসার জন্য। আর এর পরই আগরতলা থেকে শিশুটিকে তারা তরিঘড়ি নিয়ে আসে বলে নিজই স্বীকার করলেন ওই মহিলা।
পরবর্তীতে ওই কালী সাধকের বাড়ীতেই মৃত্যু হয় শিশুটির। এককথায় কু-সংষ্কারের কোপে পড়েই পুত্র হারা হতে হল ওই বাবা-মাকে। বর্তমানে দেড় বছরের একটি মেয়ে রয়েছে তাদের। আধুনিকতার ছোঁয়াতেও সমাজে কুসংষ্কারের কালো ছায়া আজো যে কাটেনি একাংশ মানুষের উপর থেকে তা আবারো উঠে এল এই ঘটনায়। আর এর থেকেই স্পষ্ট তন্ত্র মন্ত্র আর ইশ্বরে আগাধ বিশ্বাস করে চিকিৎসা শাস্ত্র থেকে দূরে থাকা ডেকে আনতে পারে মহা বিপদ। হৃদয় বিদারক এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম।