আগরতলা, ২৬ ফেব্রুয়ারী।। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ সকালে নয়াদিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পের অধীনে আগরতলা রেলওয়ে স্টেশনের পুনর্বিকাশের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ উপলক্ষে আগরতলা রেলওয়ে স্টেশনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা, কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ণ প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, বিধায়ক মীনারাণী সরকার, পদ্মশ্রী চিত্তরঞ্জন মহারাজ, পদ্মশ্রী বিক্রম বাহাদুর জমাতিয়া, পদ্মশ্রী স্মৃতিরেখা চাকমা ও লামডিং ডিভিশনের ডিআরএম প্রেমরঞ্জন কুমার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ দেশের ২৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৩২০টি জেলায় ভিডিও কনফারেন্সে রেল পরিষেবার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন। অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পে দেশের ৫৫৪টি রেলওয়ে স্টেশনের পুনর্বিকাশ এবং ১৫০০এর উপর রোড ওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। এসমস্ত প্রকল্প রূপায়ণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার কোটি টাকা।
ভিডিও কনফারেন্সে দেশবাসীকে সম্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, নতুন ভারতের নতুন কর্মসংস্কৃতির প্রতীক হল অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পে দেশের বিভিন্ন রেল স্টেশনের আধুনিকীকরণ। এসমস্ত রেল স্টেশনে উন্নত বিশ্বের মত সমস্ত ধরণের সুবিধা থাকবে। আজকের ভারত কোন ছোট স্বপ্ন দেখে না। বড় বড় স্বপ্ন দেখে এবং তা পূরণেও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পে আধুনীকৃত রেলস্টেশনগুলি সংশ্লিষ্ট শহরের ঐতিহ্য ও বিকাশের প্রতীক হবে। ভারতের প্রগতি রেলের গতিতে এগিয়ে চলছে। বিকশিত ভারতের সূত্রধার এবং লাভার্থী হল দেশের যুব সম্প্রদায়। এর ফলে তাদের জন্য রোজগার এবং স্ব-রোজগারের পথ উন্মুক্ত হবে। যুব ভারতের স্বপ্ন সফল করাই হল মোদি সরকারের সংকল্প। বিকশিত ভারতের গ্যারান্টি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গত ১০ বছরে দেশের রেল পরিকাঠামোর আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। বন্দে ভারত, অমৃত ভারত, নমো ভারত রেল পরিষেবা, রেল লাইনে সর্বাধিক বৈদ্যুতিকরণ, প্রতিটি রেল ও রেলস্টেশনের অভূতপূর্ব সাফাই কর্মকান্ডের কথা আগের কোন সরকার ভাবতে পারেনি। আগামী দিনে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যাত্রীরাও বিমানবন্দরের মত আধুনিক সুবিধা রেল ও রেলস্টেশনগুলিতে পাবেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমান অর্থবছরে রেল বাজেটে আড়াই লক্ষ কোটি টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে। দেশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে কৃষি ও শিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।
(২) অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, গত ১০ বছরে দেশে ৩১ হাজার কিলোমিটার নতুন রেল লাইন সম্প্রসারিত হয়েছে। এবছর আরও সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার রেল লাইন সম্প্রসারিত হবে। তাছাড়াও গত ১০ বছরে ৪০ হাজার কিলোমিটার রেল লাইনের বৈদ্যুতিকরণ, ১০ হাজার ওভারব্রীজ ও আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে ১৭ থেকে ১৮টি এক্সপ্রেস ট্রেন, ভিস্টাডোম কোচ, রাজধানী এক্সপ্রেস চলাচল করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘পূবে সক্রিয় হও’ নীতিতে অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৯১টি রেলস্টেশন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৭টি রেলস্টেশনকে আধুনীকিকরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ আগরতলা রেল স্টেশনের পুনর্বিকাশ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রায়শই উন্নয়নমূলক কাজে কোন ধরণের ঘাটতি যাতে না থাকে তার জন্য পরামর্শ দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের ৬টি জাতীয় সড়কের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। প্রতিদিন মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দরে ২২-২৩টি বিমান উঠানামা করছে। রাজ্যে দেশের অন্যতম হাইস্পিড ইন্টারনেট গেটওয়ে রয়েছে। ইতিমধ্যেই সোনামুড়ার শ্রীমন্তপুরে ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট টার্মিনালের উদ্বোধন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হীরা মডেলে রাজ্য দ্রুত সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে চলছে। প্রধানমন্ত্রী মানেই উন্নয়নের নিশ্চয়তা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন রাজ্যে ডাবল লেন রেল লাইনের কাজ অচিরেই শুরু হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। এই কর্মসূচি উপলক্ষে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আয়োজিত অঙ্কন, বক্তৃতা, ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদেরও অনুষ্ঠানের শুরুতে পুরস্কৃত করা হয়। অতিথিগণ বিজয়ী ছাত্রছাত্রীদের হাতে পুরস্কারগুলি তুলে দেন।