আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) সিস্টেম পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া

অনলাইন ডেস্ক, ১১ মার্চ।। সম্প্রতি একটি নতুন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) সিস্টেমের কিছু অংশ পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া। এই ধরনের অস্ত্র পরীক্ষাকে ‘গুরুতর উত্তেজনা বৃদ্ধি’ বলে আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে যে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ৪ মার্চ এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয় এবং একটি পুনরুদ্ধার স্যাটেলাইট নির্মাণের উদ্দেশেই তা নিক্ষেপ করা হয়েছিল।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন এখন বলছে যে, সম্ভাব্য পুরো মাত্রায় আইসিবিএম টেস্টের আগে নিক্ষেপ করা এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছিল মূলত পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ।

ন্যূনতম সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার (৩৪১৭ মাইল) পরিসীমাসহ এই আইসিবিএমগুলো যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত করতে সক্ষম। এছাড়া এগুলো পারমাণবিক অস্ত্র বহনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা উত্তর কোরিয়ার এই পরীক্ষাকে ‘গুরুতর উত্তেজনা বৃদ্ধি’ হিসেবে উল্লেখ করে জানিয়েছেন, পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে শুক্রবার নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। জ্যেষ্ঠ ওই মার্কিন কর্মকর্তা আরও বলেছেন, ওয়াশিংটনের আরোপ করা নতুন পদক্ষেপগুলো পিয়ংইয়ংকে তার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির আরও উন্নয়নের জন্য ‘বিদেশি আইটেম ও প্রযুক্তি’ হাতে পেতে বাধা দেবে।

ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির জন্য উত্তর কোরিয়া ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার অধীনেই রয়েছে। এছাড়া ২০১৭ সাল থেকে পিয়ংইয়ং কোনো আইসিবিএম বা পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। যদিও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন মাঝে মাঝে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি তা করতে পারেন।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, উত্তর কোরিয়ার চালানো দু’টি পরীক্ষা ‘নতুন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত’।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এই উৎক্ষেপণের তীব্র নিন্দা করছে। এই ধরনের অস্ত্র পরীক্ষা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক রেজুলেশনের লঙ্ঘন। একইসঙ্গে এটি অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা বাড়ায় এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার ঝুঁকি সৃষ্টি করে’।

আইসিবিএম বা ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল একটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে বেরিয়ে ছুটতে পারে, আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে। এই ক্ষেপণাস্ত্র অধিবৃত্তাকার গতিপথ ধরে নিশানার দিকে ছুটে চলে।

পিয়ংইয়ংয়ের সবচেয়ে বড় আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হোয়াসং-১৬; যা ২০২০ সালের অক্টোবরে উন্মোচন করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়নি দেশটি।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাত দফায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। সপ্তম দফায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর জরুরি বৈঠক করে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএসসি)। পরে এনএসসি জানায়, উত্তর কোরিয়ার নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রটি একটি মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইআরবিএম) এবং ২০১৭ সালের পর থেকে ওইদিন পর্যন্ত পিয়ংইয়ং এই ধরনের মিসাইল আর পরীক্ষা করেনি।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন সেসময় জানিয়েছিলেন, এই মিসাইল পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া তার দূরপাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষার ওপর স্ব-আরোপিত স্থগিতাদেশকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *