স্টাফ রিপোর্টার, কৈলাসহর, ৬ জুলাই।। এবার কৈলাসহর মহকুমার বিদ্যুৎ পরিসেবা প্রদানকারী বেসরকারি সংস্থা “সাই কম্পিউটার” লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই সরব হলেন শাসক বিজেপি দলের নেতা তথা কৈলাসহর পুর পরিসদের হেভিওয়েট কাউন্সিলর সিকিম সিনহা। দীর্ঘ প্রায় তিন বছর ধরে গোটা কৈলাসহর মহকুমার বিদ্যুৎ পরিসেবার দায়িত্বে রয়েছে বহিঃরাজ্যের বেসরকারি সংস্থা “সাই কম্পিউটার” লিমিটেড।
কিন্তু যেদিন থেকে কৈলাসহর মহকুমার বিদ্যুৎ পরিসেবার দায়িত্ব “সাই কম্পিউটার লিমিটেড” নিয়েছে সেদিন থেকেই কৈলাসহর মহকুমার বিদ্যুৎ পরিসেবা একেবারেই তলানিতে গেছে বলে মহকুমা বাসীর অভিমত। একই অভিযোগ প্রকাশ্যেই করেছেন কৈলাসহর পুর পরিসদের সতেরো নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিকিম সিনহা। উল্লেখ্য, বিগত প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে কৈলাসহর পুর পরিসদের সতেরো নং ওয়ার্ডের পূর্ব দূর্গাপুর এলাকায় প্রবেশের মুখে বিদ্যুৎ-এর খুঁটি বাঁকা হয়ে রয়েছে। এবং বিদ্যুৎ-,এর খুঁটি বাঁকা হবার ফলে বিদ্যুৎ পরিবাহী তার একেবারেই নীচে নেমে গেছে।
রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় এলাকাবাসীরা একটু অসতর্ক হলেই বিদ্যুৎ পৃষ্ট হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকাবাসীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করছেন। এমতাবস্থায় এলাকাবাসীরা কয়েকবার সাই কম্পিউটার সংস্থার অফিসে ফোন করে জানায় এবং কয়েকবার সাই কম্পিউটার সংস্থার অফিসে গিয়ে লিখিত ভাবে জানানোর পরও দুই সপ্তাহ সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে কিন্তু সাই কম্পিউটার সংস্থার কর্মীরা আজ অব্দি পূর্ব দূর্গাপুর এলাকায় আসার সময় পায়নি। যত দিন যাচ্ছে ততোই বিদ্যুৎ-এর খুঁটি আরও বেশি বাঁকা হচ্ছে। আর, বিদ্যুৎ পরিবাহী তার আরও নীচের দিকে নামছে। সাই কম্পিউটার সংস্থার এহেন আচরনে ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসীরা স্থানীয় কাউন্সিলর সিকিম সিনহার দারস্থ হয়ে এই ঘটনা সম্পর্কে জানান।
এই ঘটনা শোনা মাত্রই এলাকাবাসীর সামনে কাউন্সিলর সিকিম সিনহা সাই কম্পিউটার সংস্থার আধিকারিকদের ফোন করে জানালে সাই কম্পিউটার সংস্থার আধিকারিকরা কাউন্সিলর সিকিম সিনহার কাছ থেকে দুই দিনের সময় চেয়ে নেন। আগামী দুই দিনের মধ্যে সাই কম্পিউটার সংস্থার কর্মীরা এলাকায় গিয়ে বিদ্যুৎ-,এর খুটির কাজ করে দেবে বলে কাউন্সিলর সিকিম সিনহাকে জানানো হয়। এলাকাবাসীর কাছ থেকে অভিযোগ পাবার পরও সামান্য এই কাজটি করতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ায় কাউন্সিলর সিকিম সিনহাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কাউন্সিলর সিকিম সিনহা জানান যে, যদি আগামী দুই দিনের মধ্যে পূর্ব দূর্গাপুর এলাকায় সাই কম্পিউটার সংস্থার পক্ষ থেকে কাজ করে না দেয় তাহলে মহকুমাশাসক সহ আরও অন্যান্যদের নিয়ে সাই কম্পিউটার সংস্থার বিরুদ্ধে অন্যরকম পরিকল্পনা নেবেন বলে হুশিয়ারি দেন কাউন্সিলর সিকিম সিনহা। কাউন্সিল সিকিম সিনহা আরও বলেন যে, গোটা কৈলাসহর মহকুমায় সাই কম্পিউটার সংস্থার উপর সাধারণ মানুষেরা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ এবং সাই কম্পিউটার সংস্থার বিদ্যুৎ পরিসেবার মান এতটাই নিম্নমানের যে, প্রতিদিন গ্রাহকেরা ক্ষুব্ধ হচ্ছে বলে কাউন্সিলর সিকিম সিনহা জানান।
উল্লেখ্য,কৈলাসহরে একটু হালকা বৃষ্টি হলে কিংবা হালকা বাতাস হলেই বিদ্যুৎ পরিসেবা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। এলাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকার পর এলাকাবাসীরা সাই কম্পিউটার সংস্থার অফিসে ফোন করলে সংস্থার কর্মীরা ফোন রিসিভ করে না কিংবা সংস্থার অফিসে এসে কারন জানতে চাইলে অফিসে কোনো কর্মীকে পাওয়া যায় না। প্রায়ই বিদ্যুৎ পরিসেবা স্বাভাবিক করার দাবী কৈলাসহরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ কিংবা সাই কম্পিউটার সংস্থার অফিস তালাবন্ধী কিরে বিক্ষোভ প্রদর্শন কিংবা অফিস প্রাংগনে অনশন শুরু করে দেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা।
সাই কম্পিউটার সংস্থার বিদ্যুৎ পরিসেবা নিয়ে চলতি সপ্তাহে ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক তড়িৎ কান্তি চাকমার নিকট ডেপুটেশন প্রদান করেছে বামপন্থী যুব সংগঠন। সাই কম্পিউটার সংস্থার বিদ্যুৎ পরিসেবা প্রদান নিয়ে বিধায়ক বিরজিত সিনহা এতটাই ক্ষুব্ধ যে, ২০২৩সালের বিধানসভা ভোটের পরের দিন বিধায়ক বিরজিত সিনহা সাই কম্পিউটার সংস্থার কৈলাসহর শহরের অফিসের ভিতরে ঢুকে সাই কম্পিউটার সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে দুই গালে দুই চড় বসিয়ে দেন। বিধায়ক বিরজিত সিনহার হাতের দুই চড় খেয়ে সাই কম্পিউটার সংস্থার চাকুরী থেকে ইস্তফা দিয়ে ম্যানেজিং ডিরেক্টর বহিঃরাজ্যে নিজ বাড়িতে চলে যান।
এতকিছুর পরও শাসক বিজেপি দলের পক্ষ থেকে সাই কম্পিউটার সংস্থার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও কৈলাসহর পুর পরিসদের হেভিওয়েট জনপ্রিয় কাউন্সিলর সিকিম সিনহা সাই কম্পিউটার সংস্থা বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় শহরের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরা এবং শিক্ষিত মহল খুবই খুশী। সাই কম্পিউটার সংস্থার বিদ্যুৎ পরিসেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে কাউন্সিলর সিকিম সিনহা সোচ্চার হওয়ার খবর ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় শহরের বেশিরভাগ মানুষই খুশি এবং এটাই আসল জনপ্রতিনিধির রুপ বলে অনেকেই দাবী করছেন।