যুব সম্প্রদায়কে মাদকের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত রাখতে মায়েদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে : মুখ্যমন্ত্রী

 

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৭ মার্চ।। নিষিদ্ধ ড্রাগস ও নেশা দ্রব্যের অশুভ সংস্পর্শ ব্যক্তিকেই নয়, একটি পরিবারকে ধংসের পথে ধাবিত করে। যুব সম্প্রদায়কে শিরাপথে নেশা গ্রহণ থেকে বিরত রাখার মধ্য দিয়ে এইচআইভি ও মাদকের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত রাখতে মায়েদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

আজ আগরতলা টাউনহলে অল ত্রিপুরা এনজিও এসটি বোর্ডিং ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের চতুর্থ প্রতিষ্ঠা দিবস অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নিষিদ্ধ নেশা বাণিজ্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা ও এর ব্যবহার হ্রাসের লক্ষ্যে প্রাধান্যের ভিত্তিতে কাজ করছে সরকার।

আগরতলা ও উত্তর জেলায় নেশা মুক্তি কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভাবি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ যেন নষ্ট না হয় এবং যুব সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধশালী ও সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে সরকার সংকল্পবদ্ধভাবে কাজ করছে। শিরাপথে নেশাদ্রব্য ব্যবহারের ফলে যুব সম্প্রদায়ের এইচ আই ভি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

মাদককারবারীরা জনজাতি এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন জায়গাগুলিকে বাছাই করে নেশা বাণিজ্যের প্রসার করছিলো। প্রশাসনিকভাবে তা অনেকটাই বোধ করা সম্ভব হয়েছে। মায়েদের এই ক্ষেত্রে যত্নবান হওয়া আবশ্যক। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক দৃষ্টি ও রাজ্য সরকারের সদর্থক পদক্ষেপের ফলে শিক্ষাক্ষেত্রের পাশাপাশি জনজাতিদের আর্থসামাজিক জীবনমানের বিকাশে গতি এসেছে।

ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে গৃহীত পরিকল্পনার সুফল সুনিশ্চিতকরণে এনজিওগুলির কাজকর্মে আরও গতি সঞ্চার করা প্রয়োজন। জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার সার্বিক বিকাশে বিগতদিনের অনীহা থেকে পরিত্রাণের জন্য এবং উপেক্ষিত ক্ষেত্রগুলির সার্বিক বিকাশে গতি সঞ্চারিত হয়েছে। অত্যাধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা, অবকাঠামোগত বিকাশ, একলব্য বিদ্যালয়, ইউপিএসসি প্রবেশিকায় অংশগ্রহণের উপযোগী প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত সাফল্য, সিবিএসই শিক্ষা গ্রহণ, পরিশ্রুত পানীয় জল সহ সমস্ত ক্ষেত্রেই সফল বাস্তবায়ন হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের সমবিকেন্দ্রীকরণে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে সরকার। উন্নয়নের প্রশ্নে উপেক্ষিত অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করে কাজ চলছে। গন্ডাতুইসার মতো অঞ্চলে বদলিকে একটা সময়ে শাস্তিমূলক হিসেবে ধরে নেওয়া হলেও বর্তমানে ডুম্বুর সহ গোটা অঞ্চলের সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে গৃহীত গুচ্ছ পরিকল্পনা সফল বাস্তবায়িত হচ্ছে। অত্যাধুনিক লগ হাট সহ ডুম্বুরের পরিষেবা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। তার পাশাপাশি প্রান্তিক এলাকাগুলি পর্যন্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিতকরণের লক্ষ্যেও বিভিন্ন উন্নয়ন এসেছে। শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে মিশন ১০০ বিদ্যাজ্যোতি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের চালিকা শক্তি কর্মচারিদের উৎসাহিত করলেই যে সাফল্য আসে, তার একের পর এক নজির স্থাপিত হচ্ছে রাজ্যে। রাজ্যের ৪৫ শতাংশ জায়গায় পরিশ্রুত পানীয়জলের সংযোগ ইতিমধ্যেই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। রাজ্য সরকার দ্বারা প্রস্তুত আগামী ২৫ বছরের রূপরেখা ভাবি প্রজন্মের সঠিক জীবন জীবিকা নির্বাচনে অগ্রণী ভূমিকা নেবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া বলেন, জনজাতি অংশের মানুষের আর্থসামাজিক জীবনমান উন্নয়ন সরকারের প্রাধান্যের ক্ষেত্র। জনজাতি অংশের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে গুচ্ছ পরিকল্পনা রাজ্যব্যাপী সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। যার অন্যতম নিদর্শন একলবা বিদ্যালয়। বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের গুণগত শিক্ষা সুনিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এবং শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়নে গতি এসেছে।

এক্ষেত্রে এনজিওগুলিরও গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি আরও বলেন, উন্নয়নের অসমতা দূরীকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ চলছে। বিকাশের অসম বণ্টনের দ্বারা কোনও অঞ্চলেরই সার্বিক বিকাশ সম্ভব নয়। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে লক্ষ্যপথে অবিচলতা নিশ্চিত সাফল্যের পথ প্রশস্ত করে। অন্যের সমালোচনা থেকে বিরত থেকে একাগ্রতা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যক্তি সত্ত্বার বিকাশ দ্বারা সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ নির্মাণের আহ্বান রাখেন তিনি।

সরকারি সুযোগ সুবিধা এবং পরিষেবার সুফল দ্রুততার সঙ্গে নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কর্মচারিদের আরও বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ করে জনজাতি পড়ুয়াদের কাছে সমস্ত ধরনের সুযোগ সম্প্রসারণে রাজ্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। নেশামুক্ত রাজ্য নির্মাণের লক্ষ্যে সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী। এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অল ত্রিপুরা এনজিও এসটি বোর্ডিং ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের উপদেষ্টা সুকুমার দেববর্মা, সভাপতি তপতী কলই প্রমুখ।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *