অনলাইন ডেস্ক, ৫ মার্চ।। রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে বহু রাশিয়ান নাগরিককে দেশ ছেড়ে পালাতে দেখা যাচ্ছে। কারণ রাশিয়ায় ক্রমাগত গুজব ছড়িয়ে পড়ছে যে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার শীঘ্রই ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাশিয়ানদের বিক্ষোভ মোকাবেলায় দেশে সামরিক আইন চালু করতে পারেন।
ইউরোপে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় রাশিয়া থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হল গাড়ি বা ট্রেনে করে এই সীমান্ত অতিক্রম করা।
বিবিসি এমন একজন রাশিয়ান তরুণীর সঙ্গে কথা বলেছে যিনি পশ্চিমে চলে যাচ্ছিলেন। পশ্চিমারা সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো ঘোষণা করার আগেই যারা ইইউ ভিসা পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন ভাগ্যবান ওই নারী। যা ঘটছে তাতে তিনি হতাশায় ভুগছিলেন।
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের লোকেরা আমাদের মানুষ, আমাদের পরিবার। আমাদের তাদের হত্যা করা উচিত নয়’। তিনি ভবিষ্যতে ফের কখনো রাশিয়ায় ফিরে যাওয়ার কথা ভাববেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নারী বলেন, ‘পুতিনের ভয়ঙ্কর সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন আর নয়। এটা খুবই দুঃখজনক’।
তিনি বলেন যে, বেশিরভাগ রাশিয়ান এই যুদ্ধ চায় না, তবে তারা পুতিনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে জেলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে তাই তারা চুপ করে রয়েছেন।
ফিনল্যান্ডে তার মতো মানুষদের জন্য অপরিসীম সহানুভূতি রয়েছে, ঠিক যেমন ইউক্রেন এবং এর বাসিন্দাদের জন্যও রয়েছে। এই সহানুভূতি এবং রাশিয়া ফিনল্যান্ডের মতো অন্যান্য প্রতিবেশীদের ওপরও আঘাত করতে পারে সেই ভয় থেকেই নিরপেক্ষতার প্রতি নিজের ঐতিহ্যগত ঝোঁকের প্রতি মনোভাব পরিবর্তন করছে ফিনল্যান্ড।
সাম্প্রতিক জনমত জরিপ অনুসারে, ফিনল্যান্ডের জনগণের একটি ক্রমবর্ধমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিশ্বাস করে যে তাদের দেশেরও ন্যাটোতে যোগদান করার এবং জোটের সদস্যপদ পেলে যে নিরাপত্তা পাওয়া যাবে তা গ্রহণ করার সময় এসেছে।
রাশিয়ার রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে চলাচলকারী ট্রেনে করে শত শত রুশ নাগরিক পালিয়ে আসছে। যার ফলে ট্রেনের টিকেটের দামও বেড়ে গেছে। তবুও বেশিরভাগ ট্রেনের টিকেট ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ বুক করা হয়ে গেছে।
রাশিয়া ছেড়ে আসা যাত্রীরা যে পরিমাণ অর্থ আনতে পারছেন তাও সীমিত। রুবল ধসে পড়া অবস্থায় আছে; রাশিয়ার অর্থনীতি নিষেধাজ্ঞা এবং অনেক বড় বড় পশ্চিমা কোম্পানির প্রত্যাহারের কারণে হুমকির সম্মুখীন। রাশিয়ার সরকার ব্যাঙ্কে দৌড় এড়াতে মরিয়া।
ধনী রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কি তাদের প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বিপদে ফেলবে? এটা অবশ্য অসম্ভব নয়, কিন্তু তা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করতে তাকে বাধ্য করার সম্ভাবনা নেই।
তবে পুতিনের জন্য বেশি উদ্বেগের বিষয় হল রাশিয়ার তেল জায়ান্ট লুকোয়েলের ইউক্রেনে আক্রমণ থামানোর আহ্বান। যদি রাশিয়ান অর্থনীতির মূল উপাদানগুলো পুতিনের বিরুদ্ধে চলে যায়, তবে বড় পরিবর্তন না এনেই তার শাসন চালিয়ে যাওয়া আরও কঠিন হবে। এজন্য পুতিনকে সামরিক আইন জারি করতে হতে পারে।
রাশিয়া ছেড়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে চলে আসা আরেক নারী বিবিসিকে ফোনে বলেছেন যে, তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে ফিরে যাওয়ার ভয় পেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার বয়স ৩০, আমি সবচেয়ে খারাপটা এখনো দেখিনি… নিপীড়ন, গোপন পুলিশ। আমার খুব স্পষ্ট ভয় ছিল যে, আমি যদি এখনই পালাতে না পারি তাহলে আমি আর কখনোই পালাতে পারব না’।
ওই নারী আরও বলেন, ‘একদিকে, মনে হচ্ছে এখনই বের হওয়ার মুহূর্ত। অন্যদিকে, এই ভয়ও রয়েছে যে, আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারকে দেখতে পারবেন না বহুদিন। একমাত্র ঈশ্বরই জানেন কতদিন। চিরদিনের জন্যও হতে পারে’।
যদি সামরিক আইন জারি করা হয়, পুতিন রাজপথে বিক্ষোভের ক্ষতির বিষয়ে চিন্তা না করেই তিনি যা করতে চান তা করার স্বাধীনতা পেয়ে যাবেন। তিনি ইতিমধ্যেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, পুরো ইউক্রেন দখল না করা পর্যন্ত তিনি থামবেন না। এবং একজন ফরাসি কর্মকর্তা যিনি তাদের ফোনালাপ শুনেছিলেন তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তার মানে সামনে আরও ভয়ঙ্কর দিন আসছে।
এমনকি পারমাণবিক হামলাও হতে পারে। এটি একটি ভীতিজনক সম্ভাবনা।
এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে, রাশিয়ানদের মধ্যে যারা এই আগ্রাসন এবং এর ফলে রাশিয়ার ভেতরে যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে তা চায় না, তারা দেশ থেকে বেরিয়ে যেতে মরিয়া। এবং বাইরের দুনিয়ায় গিয়ে স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করতে চায়।