মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষুতে জনতার অভাব ও অভিযোগের কথা শুনলেন প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা

আগরতলা, ৬ নভেম্বর।। মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচির ৩৫তম পর্বে আজও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহার সাথে সাক্ষাৎ করেন। প্রত্যেকেই তাদের বিভিন্ন সমস্যা, অভাব ও অভিযোগের কথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। এদের মধ্যে সিংহভাগই এসেছেন চিকিৎসায় সহায়তার আর্জি নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

লেফুঙ্গার বিজয় দেববর্মা তাঁর ৮ বছর বয়সী মেয়ের চিকিৎসা সংক্রান্ত সহায়তার আর্জি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। বিজয় দেববর্মার মেয়ে জন্মের পর থেকেই রাইট সাইড ফিমার সংক্রান্ত জটিল রোগে ভুগছে। মেয়ের চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে বিজয় দেববর্মা তার সঞ্চয়ের সব টাকা খরচ করে ফেলেছেন। বর্তমানে আর্থিক দূরাবস্থার কারণে সে তার মেয়ের সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এই অবস্থায় তিনি তার মেয়ের চিকিৎসার খরচ চালানোর অক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী বিজয় দেববর্মার মেয়ের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে সঙ্গে সঙ্গেই জিবি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল সুপার ডাঃ তপন মজুমদারকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি সমাজকল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে বিজয় দেববর্মাকে কিভাবে সাহায্য করা যেতে পারে সে বিষয়টি দেখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়কে নির্দেশ দেন।

আগরতলার প্যালেস কম্পাউন্ডের বাসিন্দা শ্যামল কর্মকার তার স্ত্রীর চিকিৎসা সংক্রান্ত সহায়তার আর্জি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। পেশায় টায়ার বিক্রয় দোকানের কর্মচারি শ্যামল কর্মকারের স্ত্রী সম্প্রতি ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। ফলে তার স্ত্রীর দুটি চোখই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসকগণ তার স্ত্রীর চোখের চিকিৎসার জন্য ইনজেকশন নেওয়ার কথা বলেন যা অত্যন্ত ব্যয় বহুল। ফলে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে শ্যামল কর্মকার তার স্ত্রীর সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এই অবস্থায় শ্যামল কর্মকার তার স্ত্রীর সঠিক চিকিৎসার লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্থিক সহায়তার আর্জি জানান। মুখ্যমন্ত্রী শ্যামল কর্মকারের স্ত্রীর চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে সঙ্গে সঙ্গেই জিবি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল সুপার ডাঃ তপন মজুমদারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন।

কমলপুরের রত্না দত্ত তাঁর ছেলের চিকিৎসা সংক্রান্ত সহায়তার আর্জি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। রত্না দত্তের ছেলের স্পাইনাল কর্ডে অপারেশন প্রয়োজন, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কিন্তু দরিদ্র রত্না দত্তের পক্ষে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা করানো খুবই কষ্টকর। তাই তার ছেলের উন্নত চিকিৎসার সহায়তার আর্জি নিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন। মুখ্যমন্ত্রী সাথে সাথেই তার আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন।

আমতলির লক্ষ্মী রানী দাস তার ছেলের চিকিৎসার সহায়তার আর্জি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। লক্ষ্মী রানী দাসের ৩১ বছর বয়সী ছেলের দু’টি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে তার ছেলেকে ডায়ালিসিস করানো হচ্ছে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার দরুণ সে তার ছেলের চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন। এমন অবস্থায় তিনি আর্থিক সহায়তার আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রী কাছে। মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মী রানী দাসের ছেলের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে সঙ্গে সঙ্গেই জিবি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল সুপার ডাঃ তপন মজুমদারকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি লক্ষ্মী রানী দাসের পরিবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা করতেও নির্দেশ দিয়েছেন। এভাবেই মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে আসা প্রত্যেকের সমস্যা নিরসনের মাধ্যমে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়, জিবি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল সুপার ডাঃ তপন মজুমদার, অটল বিহারী রিজিওন্যাল ক্যান্সার সেন্টারের মেডিক্যাল সুপার ডাঃ এস দেববর্মা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *