স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৩০ সেপ্টেম্বর।। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ সেপ্টম্বর শনিবার ত্রিপুরার এডিসি এলাকায় ১২ ঘন্টার বনধ পালন করছে জনজাতি ভিত্তিক আঞ্চলিক দল তিপ্রা মথা। বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় সড়ক অবরোধ, রেললাইন অবরোধ করল পিকেটাররা। যাত্রী সাধারণ চরম হয়রানির শিকার হয়েছে। যদিও পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে গোটা রাজ্যেই এডিসি এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
আমাদের মূল দাবী সাংবিধানিক সমাধান। এ ব্যাপারে দিল্লিতে মহারাজার সংগে যে কথা চলছে এর ইতি টানা হোক। অনেক অপেক্ষা হয়েছে আমাদের দাবি পুরন করতে হবে অতিসত্বর। এই কথা গুলো বলেন বনধ সমর্থনে এসে তিপ্রামথা নেতৃত্বরা। তিপ্রামথা’র এডিসি এলাকার বনধের প্রভাব আসাম আগরতলা জাতীয় সড়ক সহ রেললাইনে। সকাল থেকেই বড়মুড়া এবং মুঙ্গিয়াকামী এলাকায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখে পিকেটাররা। স্তব্ধ হয়ে পড়ে যান চলাচল। এর পাশাপাশি মুঙ্গিয়াকামী রেল স্টেশন চত্ত্বর এলাকায়ও পিকেটিনং করে রেল চলাচলও বন্ধ করে দেয় তিপ্রামথা দলের সমর্থকরা। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। মুঙ্গিয়াকামী এলাকায় মথা নেতৃত্বদের মধ্যে ছিলেন নির্বাহী সদস্য কমল কলই, মনিহার দেববর্মা, গীতা দেববর্মা প্রমুখ।
এদিকে বড়মুড়া এলাকায় জাতীয় সড়কে বনধ সমর্থনে আসা কর্মীদের মনোবল বাড়াতে উপস্থিত ছিলেন এডিসির চেয়ারম্যান জগদিশ দেববর্মা সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা। পাশাপাশি তেলিয়ামুড়া মহকুমার বিভিন্ন এডিসি এলাকার মধ্যে দুস্কি, রাংখল পাড়া, মানিকবাজার ইত্যাদি এলাকায়ও বনধ সমর্থনে পিকেটিং করা হয়। জানা যায় এ সমস্ত এলাকায় স্কুল সহ অফিস, দোকানপাট খুলতে দেয়া হয়নি।
তিপরা মথার ডাকা বনধের প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ জেলা জুড়ে।
স্বাভাবিক জনজীবন অচল হয়ে পড়ে। গ্ৰেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবিতে ৩০ শে সেপ্টেম্বর বারো ঘন্টার বনধের ডাক দেয় তিপ্রা মথা। এই বনধের প্রভাব পরেছে দক্ষিণ জেলা জুড়ে। দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল না করলেও সমতল এলাকায় দোকান পাট, বাজার সব কিছু ছিল খোলা। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে এডিসি এলাকায়। যান চলাচল যেমন স্তব্দ হয়ে যায় তেমনি স্বাভাবিক জনজীবন অচল পরে। এডিসি এলাকায় দোকান পাট হাট বাজার সবই ছিল বন্ধ। বিলোনিয়া মহকুমাধীন ঋষ্যমুখ ব্লকের এডিসি এলাকাগুলিতে বনধের প্রভাব পড়েছে । তিপ্রা মথা দলের নেতা কর্মী সমর্থকরা বিভিন্ন এলাকায় পিকেটিং করে স্লোগান তুলল গ্ৰেটার তিপ্রাল্যান্ডের।
বনধকে কেন্দ্র করে এদিন সকাল ছয়টা থেকে ঋষ্যমুখ ব্লকের রতনপুর এডিসি সাব জোনাল অফিসের সামনে বাঁশের বেরিকেড ও দলীয় পতাকা মুড়িয়ে বিলোনিয়া ভায়া জোলাইবাড়ি জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখে তিপ্রা মথার নেতা কর্মী সমর্থকরা। বনধকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আরক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামানো হয়েছে পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী। চলছে পুলিশের টহলদারি ও নজরদারি। এদিনের বনধের সমর্থনে পিকেটিংয়ে তিপ্রা মথা দলের কর্মী সমর্থকদের পাশাপাশি ছিলেন দলের সাব্রুম পলিটিক্যাল জেলার ভাইস প্রেসিডেন্ট সুবিন ত্রিপুরা, রতনপুর সাব জোন্যাল চেয়ারম্যান এলভার্ট ত্রিপুরা, ওয়াইটিএফ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় ত্রিপুরা সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা ।
শনিবার পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী তিপ্রা মথার ডাকা এ ডি সি এলাকায় ১২ র ঘন্টা বনধ সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয়েছে। বাদ যায়নি উদয়পুর মহকুমায় কিল্লা বিধানসভা এলাকার দেওয়ান বাজার এলাকা। সকাল থেকে তিপ্রা মথার কর্মী ও সমর্থকরা দেওয়ান বাজার এলাকায় জমায়েত হতে থাকে। উদয়পুর – কিল্লা এলাকায় যানবাহন থেকে শুরু করে বাজার হাট সব ছিল বন্ধ। সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে বিদ্যালয়য়ে শিক্ষক শিক্ষিকারা বিদ্যালয় মুখী হতে পারেনি। ফলে তৈরি হয় এক অচলাবস্থা। দলের গোলাঘাটি এলাকার বিধায়ক মানব দেববর্মা জানান গ্ৰেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবিতে আজকের এডিসি এলাকায় তিপ্রা মথার ডাকে যে বার ঘন্টা বনধ ডাকা হয়েছে তা শুধু এ ডি সি এলাকায় সফল হয়েছে বলা যাবে না কারন এই দাবির সমর্থনে এডিসি এলাকার বাইরের জনগন সহ ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলেনি। আগামী দিনে তিপ্রা ল্যান্ডের দাবি মানা না হলে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলা হবে বলে জানান দলের বিধায়ক মানব দেববর্মা।
এদিকে তিপ্রা মথার ডাকা বারো ঘন্টার এডিসি এলাকার বনধের সমর্থনে উদয়পুর – অমরপুর রাস্তার ওয়ারেঙ্ক বাড়ি এলাকায় তিপ্রা মথার দলীয় কর্মী সমর্থকরা রাস্তা অবরোধ করে। ফলে উদয়পুর – অমরপুর রাস্তা দিয়ে কোন গাড়ি যাতায়ত করেনি। রাস্তা অবরোধের নেতূত্বে ছিলেন এডিসি- র মুখ্য নির্বাহী সদস্য পূর্ন চন্দ্র জমাতিয়া। তিনি জানান গত ৭৫ বছর ধরে জনজাতিরা অবহেলিত হয়ে আসছে। গ্ৰেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবির সমর্থনে সারা রাজ্যের এডিসি এলাকায় বার ঘন্টার বনধের যে আহ্বান করা হয়েছে তা শান্তি পূর্ন ভাবে পালিত হচ্ছে বলে জানান পূর্ন চন্দ্র জমাতিয়া। উদয়পুর – অমরপুর রাস্তায় ওয়ারেঙ্ক বাড়ি এলাকায় রাস্তা অবরোধের ফলে যানবাহন চলাচল করেনি। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে জনগণ।
বড়মুড়ায় সাধুপাড়া এলাকায় তিপ্রা মথার পিকেটিং করার সময় রাস্তার পাশে সুতলি বাধা তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়। পুলিশ তড়িঘড়ি বোমা উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করেছে। ওই এলাকায় বিএসএফ জওয়ান ও অধিকারীকদের সাথে তিপ্রা মথা সমর্থকদের ধস্তাধস্তি হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পুলিশের এসপি সহ পদস্থ আধিকারীকরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।তিপ্রা মথার ডাকা ১২ ঘণ্টার বনধকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত জাতীয় সড়কের খোয়াই চৌমুহনী এলাকা। পথ অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে। একই ভাবে টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করা হয় লেম্বুছড়ায়। সেখানেও টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে।