গ্যালারি থেকে নেমে এলেন হিজাব পরা এক নারী, জড়িয়ে ধরলেন হাকিমিকে, কে তিনি?

অনলাইন ডেস্ক, ১১ ডিসেম্বর।। কেউ ভাবেননি এ দৃশ্য দেখবেন। একদিকে যখন কাঁদতে কাঁদতে টানেল দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, অন্যদিকে তখন আনন্দে পাগলের মতো নাচছেন আশরফ হাকিমি, হাকিম জিয়েচরা। রোনালদোর ছেড়ে যাওয়া মঞ্চে নতুন নায়ক হয়ে উঠছেন তারা। ঠিক তখনই দেখা গেল গ্যালারি থেকে নেমে এলেন হিজাব পরা এক নারী। জড়িয়ে ধরলেন হাকিমিকে। কে তিনি?

তিনি হাকিমির মা। ছেলের খেলা দেখতে এসেছেন। ছেলে স্বপ্ন পূরণ করেছে তার। তাই নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেননি। মাকে দেখে চোখের জল বাঁধ মানল না হাকিমির। অনেকক্ষণ মাকে জড়িয়ে ধরে রাখলেন তিনি। তার পরে আবার ছুটে গেলেন দলের কাছে।

মরক্কোর হয়ে খেললেও হাকিমির জন্ম স্পেনের মাদ্রিদে। ২০১৬ সালে রিয়াল মাদ্রিদ কিনেছিল তাকে। কিন্তু এক মৌসুম পরেই লোনে পাঠিয়ে দিয়েছিল বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে। সেখান থেকে ২০২০ সালে ইন্টার মিলান হয়ে এখন তিনি খেলেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে।

মেসির ক্লাব, নেইমার, এমবাপের ক্লাবে খেলার পাশাপাশি দেশের জার্সিতে মরক্কোর অন্যতম ভরসার জায়গা হাকিমি। এবারের বিশ্বকাপে দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন তিনি। দলকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তোলার পেছনে বড় ভূমিকা নিয়েছেন হাকিমি। খেলা শেষে আরও এক মাকে দেখা গেল মাঠে। তিনি মরক্কোর আর এক ফুটবলার বৌফালের মা। মাঠে নেমে ছেলের সঙ্গে উৎসবে মাতলেন তিনিও।

আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না হাকিমিদের। বাবা রাস্তায় ঠেলাগাড়িতে খেলনা বিক্রি করতেন। সংসার চালাতে তাই মাকে বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করতে হতো। নিজেরা আধপেটা খেলেও ছেলের স্বপ্নকে মরতে দেননি হাকিমির মা। তিনি নিজে অনেক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার ফুটবলার হওয়ার পেছনে সব থেকে বড় অবদান তার মায়ের। ছেলে ফুটবলার হলেও এখনও নিজের পেশা ছাড়েননি তিনি। নিজে উপার্জন করতে চান। ফুটবল জীবনের সেরা দিনে তাই মাকে জড়িয়ে উৎসব করলেন হাকিমি।

আফ্রিকার দেশ মরক্কো। বিশ্বকাপে পড়েছিল ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়ামের গ্রুপে। কেউ আশা করেনি, গ্রুপ পর্ব টপকাতে পারবে তারা। সেই মরক্কো শীর্ষে থেকে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। গতবার তৃতীয় স্থান পাওয়া বেলজিয়ামকে হারিয়েছে। গতবারের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ড্র করেছে। শেষ ষোলোয় হারিয়েছে প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে। আর কোয়ার্টার ফাইনালে শেষ করে দিয়েছে রোনালদোর স্বপ্ন। এখনও পর্যন্ত একটি ম্যাচেও হারেনি তারা। গোটা প্রতিযোগিতায় গোল খেয়েছে মাত্র ১টি। তা-ও আত্মঘাতী।

স্বপ্ন দেখছে মরক্কো। স্বপ্ন দেখছেন মরক্কোবাসী। স্বপ্ন দেখছেন হাকিমির মা। ছেলের পায়ে সেমিফাইনালে আরও একটা জয়ের। স্বপ্ন দেখছেন, এভাবেই আরও একবার খেলা শেষে ছেলেকে জড়িয়ে ধরবেন তিনি। এঁকে দেবেন স্নেহচুম্বন।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *