স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১৭ অক্টোবর।। আটচল্লিশ বছর পর বর্তমান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহার হাত ধরে ডম্বুর জলাশয়ে অবস্থিত নারকেল কুঞ্জটি পূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রের স্বীকৃতি পেলো বলা যায়। প্রসঙ্গত উনিশশো চুয়াত্তর সালে ডম্বুর বাঁধের সৃষ্টির ফলে ডম্বুর জলাশয়ের সৃষ্টি হয়। প্রায় পয়ত্রিশ হাজার বর্গফিটের ডম্বুর জলাশয়ের মাঝে প্রাকৃতিক সুন্দর্যকে আঁকড়ে ধরে মাথা উঁচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে আসছিলো নারকেল কুঞ্জটি। নারকেল কুঞ্জটি যে দ্বীপটিতে অবস্থিত সৃষ্টিলগ্নে ওই দ্বিপে কোন নারকেল গাছ ছিল না। কিন্ত গোটা জলাশয়ের মধ্যমনি ওই দ্বীপটি তৎকালীন রাজ্য সরকারের নজরে আসে। তৎকালীন রাজ্য সরকারের নির্দেশে কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে ওই দ্বীপটিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নারকেলের চারা রোপন করা হয়।
উনিশশো আশি সালে রাজ্যে বৈরী তৎপরতা শুরু হলে নারকেল কুঞ্জ সাজানোর কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে। ডম্বুর জলাশয় থেকে বৈরী কর্তৃক একে একে অপহৃত হতে হয় বহু মৎস্যজীবিকে। তখন ভয়ে কেউ ডম্বুর জলাশয়ে পা মারাতো না। নারকেল কুঞ্জে যাওয়ার কোন গাড়ির রাস্তা ছিল না। নারকেল কুঞ্জে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকাপথ। বৈরী তৎপরতা অনেকটা দমন হওয়ার পর গত দুই হাজার দশ সালে নারকেল কুঞ্জটিকে কিভাবে পর্যটন কেন্দ্রের রূপ দেওয়া যায় বা পর্যটকদের কাছে কিভাবে আকৃষ্ট করা যায় তার উপর নজর দেন তৎকালীন রাজ্য সরকার। নারকেল কুঞ্জটিকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রের রূপ দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারস্থ হন তৎকালীন রাজ্য সরকার। সবুজ সংকেতও পেয়েছিল রাজ্য সরকার। নারকেল কুঞ্জের উন্নয়নে পঁচিশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যটন দপ্তর। এরপরই রাজ্যে নতুন সরকারের প্রতিষ্ঠা। এতে নারকেল কুঞ্জটিকে সাজানোর কাজ দ্রুত গতিতে শুরু হয়।
গত বছরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের হাত ধরে নারকেল কুঞ্জ পেয়েছে হেলিপ্যাড। এতে বহিরাগত পর্যটকরা নারকেল কুঞ্জে পৌঁছুতে অনেকটা সহজ হয়েছে। নারকেল কুঞ্জে রয়েছে ওয়াটার স্কুটি এবং মোটর চালিত বোট। এরফলে যেকোনো ব্যক্তি খুব কম সময়ে ডম্বুর জলাশয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। বাকি ছিল পর্যটকদের রাত্রিযাপন করার ব্যবস্থা। পরিষেশেষ বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহার হাত ধরে সেই ব্যবস্থাও পাকা হলো। নারকেল কুঞ্জে পর্যটকদের রাত্রিযাপন করার জন্য পনেরোটি লগ হাট নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয় সম্প্রতি।
পনেরোটি লগ হাটই ভি আই পি এবং ভি ভি আই পি ক্যাটাগরীর। রয়েছে উন্নতমানের পরিষেবা। ওই পনেরোটি লগ হাট -এর শুভ উদ্বোধন হলো সোমবার। শুভ উদ্বোধন করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা। সোমবার হেলিকোপ্টার যোগে নারকেল কুঞ্জের হেলিপ্যাড -এ পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গী হিসাবে ছিলেন সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা, তথ্য সংস্কৃতি পর্যটন মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়, কিরণ গিত্যে সহ অন্যান্যরা। পনেরোটি লগ হাট উদ্বোধন করে গোটা নারকেল কুঞ্জটি ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্যরা।
পড়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা উদ্বোধনী সভায় যোগ দেন। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়। ওই সভায় নারকেল কুঞ্জের শ্রীবৃদ্ধি কামনা করেন সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা। উদ্বোধকের ভাষণে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা বলেন তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে নারকেল কুঞ্জে আসার পর জানতে পারেন ডম্বুর জলাশয়ের মাঝে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের রাজ্যে নারকেল কুঞ্জের মতো একটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এই নারকেল কুঞ্জের শ্রীবৃদ্ধি ঘটানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে জানান তিনি।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা আশা ব্যক্ত করে বলেন এই নারকেল কুঞ্জকে কেন্দ্র করে অত্র এলাকার সাধারণ মানুষের আর্থ সামাজিকের বিকাশ ঘটবে। ঘরে বসেও বিভিন্ন সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে এলাকাবাসিরা। সোমবারের ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিল সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভীড়। ডম্বুর জলাশয়ের মধ্যমনি নারকেল কুঞ্জে পর্যটকদের রাত্রিযাপনের সুব্যবস্থায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহার হাত ধরে নারকেল কুঞ্জটি পূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রের স্বীকৃতি পেলো বলা যায়।