অনলাইন ডেস্ক, ৭ অক্টোবর।। নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে ইরানে চলমান বিক্ষোভের একজন আইকন নিকা সাকরামি নামের এক কিশোরীর মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত শুরুর পর মিথ্যাচার শুরু করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভের শুরুর দিকেই মৃত্যু হয় এই স্কুলছাত্রীর। চলতি সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পর ইরানের হাইস্কুল ছাত্রীরাও এই বিক্ষোভে যোগ দিলে এই পদক্ষেপ নেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পরপরই হিজাবকে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করার সময়ও হাইস্কুলছাত্রীরা রাস্তায় নেমে এসেছিল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায় স্কুলের ভেতরে ছাত্রীরা মাথার হিজাব খুলে ‘স্বৈরাচারের মৃত্যু চাই’ স্লোগান দিচ্ছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির ছবি পদদলিত করতেও দেখা গেছে। তাদের ছবির দিকে ছাত্রীরা নিজেদের হাতের মধ্যমা আঙ্গুলও প্রদর্শন করে। রাস্তার বিক্ষোভেও যোগ দিয়েছে স্কুলছাত্রীরা। চলমান বিক্ষোভে অংশ নেয়া দুই কিশোরীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের বিরুদ্ধে।
এর মধ্যে ১৬ বছর বয়সী সারিনা ইসমাইলজাদেহর মাথায় লাঠি (ব্যাটন) দিয়ে আঘাত করা হয়। নিহত কিশোরী নিকা সাকরামিও চলতি সপ্তাহান্তে ১৭ বছর বয়সে পা রাখতেন। তিনি ইতিমধ্যেই অনলাইনে বিক্ষোভকারীদের আইকনে পরিণত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি বিক্ষোভের প্রথম দিনগুলোতেই তাকে হত্যা করা হয়েছিল। কয়েকদিন নিখোঁজ থাকার পর তার পরিবার নিকার মৃত্যুর ব্যাপারে জানতে পারে। কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, নিকার শরীরে কোনো গুলির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি এবং সে সম্ভবত বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছে।
বিবিসি জানায়, বুধবার রাতে ইরানের একটি রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলের খবরে তার খালা আতাশ এবং খালু মোহসেনকে বলতে বাধ্য করা হয়েছে যে, সে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছে। আতাশ তার ভাগ্নী নিকা সাকরামির মৃত্যুর খবর অনলাইনে পোস্ট করার পর তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়।এর আগে সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানায়, তেহরানের পাবলিক প্রসিকিউটর আলি সালেহি মঙ্গলবার গভীর রাতে বলেন, ‘নিকা সাকরামির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের জন্য ফৌজদারি আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার তদন্তের নির্দেশ জারি করা হয়েছে’।আরেক রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসনিম জানায়, নিকার মৃত্যুর ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর বুধবার রাতেই তার খালা আতাশ এবং খালু মোহসেনকে বলতে বাধ্য করা হয়েছে যে, সে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছে। ইরানের বিচার বিভাগ বলেছে, যে রাতে নিকা নিখোঁজ হয় সে রাতেই সে একটি ভবনের ছাদে যায়, যেখানে আটজন নির্মাণ শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন এবং পরের দিন সকালে তাকে ভবনের নিচে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।