জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে

অনলাইন ডেস্ক, ২৯ সেপ্টেম্বর।। জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। বলা হচ্ছে, হাইপ্রোফাইল এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চার্চের (গির্জা) একটা যোগসূত্র রয়েছে। এমনকি জাপানের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সঙ্গে চার্চের যোগ রয়েছে। তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে এমনটাই বলা হয়েছে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই মাস পর মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী আবের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এদিন রাজধানী টোকিওর নিপ্পন বুদোকান ইন্ডোর এরিনায় ফুলেল শ্রদ্ধা, প্রার্থনা আর ১৯টি তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানায় জাপান।

আবের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসসহ প্রায় ৭০০ বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, শেষকৃত্যে বেশি টাকা খরচ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে অনুষ্ঠানস্থলের কাছেই আবার বিক্ষোভ হয়। আবের এ শেষকৃত্যানুষ্ঠানের দিনই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আল জাজিরা। আর তাতেই উঠে আসে নতুন ও চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্তকারীরা বলছেন, শিনজো আবে হত্যাকারী তেতসুয়া ইয়ামাগামির প্রথম লক্ষ্য ছিলেন না। তার প্রধান টার্গেট ছিলেন ‘ইউনিফিকেশন চার্চ’ নামে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর নেতা হ্যাক জা হান মুন। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি তার পরিকল্পনায় বাধ সাধে।

১৯৫৪ সালে ইউনিফিকেশন চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন হ্যা জা হান মুনের স্বামী সান মিয়ং মুন। এক দশক পরে এটি জাপানেও এর শাখা বিস্তার করে। ২০১২ সালে সান মিয়ং মুনের মৃত্যুর পর চার্চের নেতৃত্বে আসেন হ্যাক জান হান মুন। সংগঠন পরিচালনার সুবাদে প্রায়ই তিনি জাপানে আসতেন। কিন্তু করোনা মহামারিকালে সীমান্তে নানা বিধিনিষেধের কারণে জাপানে আসা বন্ধ করে দেন। হ্যাক জা হান মুন বা ইউনিফিকেশন চার্চের ওপর ক্ষোভ ছিল তেতসুয়ার। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এ চার্চ তার পরিবারের আর্থিক দুর্দশার জন্য দায়ী। এ চার্চের বিরুদ্ধে মানুষের থেকে জোরপূর্বক অনুদান নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবেকে গুলি করে হত্যা করার একদিন আগেই (৭ জুলাই) ইউনিফিকেশন চার্চের সমালোচনা করে লেখালেখি করে এমন একজন ব্লগারকে একটি চিঠি পাঠান তেতসুয়া। তাতে তিনি আবেকে হত্যার কারণ উল্লেখ করেন। চিঠিতে তেতসুয়া বলেন, হ্যাক জা হান মুনকে হত্যা করা ‘অসম্ভব’।

আর যদিও আবে ‘আমার আসল শত্রু’ নয়, কিন্তু তিনি ইউনিফিকিশন চার্চের অন্যতম বড় ভক্ত। পরদিনই (৮ জুলাই) জাপানের নারা শহরে এক রাজনৈতিক কর্মসূচি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় শিনজো আবেকে গুলি করে ৪১ বছর বয়সী তেতসুয়া। কয়েক ঘণ্টা পর আবের মৃত্যু হয়। আবের এ অনাকাঙিক্ষত ও আকস্মিক মৃত্যুতে জাপানের পাশাপাশি পুরো বিশ্বকে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে ফেলে। আবে হত্যাকাণ্ডের পরই তড়িঘড়ি করেই প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ঘোষণা দেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে আবের শেষকৃত্য পালন করা হবে।

হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন পর জাপানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) ভোট দিয়ে জয়ী করে দেশটির জনগণ। আবের অকাল মৃত্যুতে শোকাকুল হয়েছে জাপানিরা। তবে তাদের সেই শোক শিগগিরই ক্ষোভে পরিণত হয়। এর কারণ আবে ও তার দল এলডিপির সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক ইউনিফিকেশন চার্চের দহরম-মহরমের তথ্য একের পর এক উঠে আসে জাপানি গণমাধ্যমে। উঠে আসে চার্চের জোরপূর্বক অনুদান আদায়ের ভয়াবহ তথ্যও। যার কারণে জাপানের বহু নাগরিক সর্বশান্ত হয়েছে। আবের হত্যার দিনই ঘাতক তেতসুয়াকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদেও তিনি আবেকে হত্যার কারণ জানিয়েছেন।

পুলিশকে তিনি বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সমর্থনের কারণে আবেকে হত্যা করেছেন তিনি। এমন একের পর এক তথ্য সামনে আসায় প্রধানমন্ত্রী কিশিদার জনপ্রিয়তা প্রায় রাতারাতি অর্ধেকে নেমে আসে। আবে হত্যার সময়ও যেখানে তার জনপ্রিয়তা ছিল ৬৭ শতাংশ, সেখানে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি এসে দাঁড়ায় মাত্র ২৯ শতাংশে। এমনকি তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতও এখন হুমকির মুখে পড়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ১৯৫৪ সালে দ্য ফ্যামিলি ফেডারেশন ফর ওয়ার্ল্ড ফিস অ্যান্ড ইউনিফিকেশন নামে (যা ইউনিফিকেশন চার্চ নামে সমধিক পরিচিত) একটি ধর্মীয় সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন সান মিয়ং মুন। প্রায় এক দশক পর ১৯৬৮ সালে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নবুসুকে কিশির সহযোগিতায় দেশটিতে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর ভিক্টরি ওভার কমিউনিজম নামে একটি শাখা খোলেন তিনি।

শিনজো আবের দাদা নবুসুকে ও সান মিয়ং মুন একে অপরের বন্ধু ছিলেন। ধর্মীয় সংগঠন হলেও জাপানে এর কার্যক্রম অনেকটা রাজনৈতিক সংগঠনের মতোই। আবের দল এলডিপির ওপর এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন মতে, এলডিপির অন্তত ডজনখানেক মন্ত্রণালয় ইউনিফিকেশন চার্চের নিয়ন্ত্রণে।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *