স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৫ সেপ্টেম্বর।। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস ও সরকা প্রয়াসের অন্তর্নিহিত অর্থই হল একাত্ম মানবতাবাদ। এই একাত্ম মানবতাবাদের রূপকার হলেন পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়। পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় বলেছেন সমাজ যতক্ষণ শক্তিশালী হবেনা ততক্ষণ দেশও শক্তিশালী হবে না।
আজ তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, কারামন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিমগের চেয়ারম্যান টিংকু রায়, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী ও অধিকর্তা রতন বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান আয়োজনের তাৎপর্য ব্যাখা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা বলেন, স্বাধীনত্তোর ভারতবর্ষ মিশ্র মতবাদের উপর ভিত্তি করেই পরিচালিত হচ্ছিল। যেখানে দেশের জনগণের চাইতে রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি বিশেষকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে ভারতবর্ষকে দেশ হিসাবে সুসংগঠিত করতে পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় কাজ করে গেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের মতে এই পৃথিবীতে প্রত্যেকে একে অপরের পরিপূরক। তাই সমাজের একেবারে শেষ ব্যক্তির উন্নয়নের জন্য তিনি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, দীনদয়াল উপাধ্যায়ের মতে দেশকে যুদ্ধ এবং শাস্তি উভয় সময়েই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তবেই উন্নত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠার সাথে সাথে সুসংগঠিত দেশ গড়ে উঠবে। মুখ্যমন্ত্রী আপামর জনসাধারণকে দীনদয়াল উপাধ্যায়কে জানার জন্য তার রচিত বিভিন্ন বই পড়ার জন্য সকলকে অনুরোধ জানান।
দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ভারতীয়ত্বকে ভিত্তি করে দেশ পরিচালনার চিন্তাভাবনাকে পাথেয় করেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশ পরিচালনা করছেন বলেও মুখ্যমন্ত্রী অভিমত প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, দীনদয়াল উপাধ্যায়ের সম্পূর্ণ জীবনটাই একটা দর্শন।
পৃথিবীর বিভিন্ন সুপরিচিত মতবাদগুলো শুধু মানুষে মানুষের মধ্যে বিভেদই সৃষ্টি করেছে। কিন্তু দীনদয়াল উপাধ্যায়ের একাতু মানবতাবাদের মূল মন্ত্রই হল পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের উন্নয়ন। এখানে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। উন্নয়ন শুরু হবে সমাজের সবচেয়ে অন্তিম ব্যক্তির কল্যাণের মধ্য দিয়ে। বর্তমান কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সেই মতবাদে বিশ্বাসী হয়েই সকলের উন্নয়নে ব্রতী রয়েছে।
উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই বিশ্বাসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনা অতিমারীর সময় নিজের দেশের সকল মানুষের জন্য বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও করোনা ভ্যাকসিন পাঠিয়েছিলেন। এতেই বোঝা যায় পৃথিবীর কল্যাণেও ভারতবর্ষ যেটা চিন্তা করে সেটাই করে।
উপমুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ভারতবর্ষকে শুধু মানচিত্র দিয়েই বিবেচনা করলে হবে না, এর একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও রয়েছে। ভারতীয়ত্বের মধ্যে রয়েছে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবোধ। অনুষ্ঠানে কারামন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল বলেন, পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় ছোটবেলা থেকে দারিদ্রতাকে প্রবলভাবে অনুভব করেছিলেন।
সেই অনুভব থেকে মানুষ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সকলে এক হয়ে সমাজের সমস্যাগুলি কিভাবে নিরসন করা যায় তা নিয়ে জন আন্দোলন গড়ে তুলেন। প্রকৃত দেশ সেবাই ছিল দীনদয়াল উপাধ্যায়ের মূল উদ্দেশ্য।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, প্রকৃত মহাপুরুষদের জন্মদিবস পালনের মূল উদ্দেশ্যই হল আগামী প্রজন্মকে তাদের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন করা। কিন্তু রাজ্যে বিগত সরকারগুলোর আমলে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভারতবর্ষের একান্ত আপন অনেক মহাপুরুষ সম্পর্কে জানার জন্য কোন উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।
কিন্তু বর্তমান সরাকারের আমলে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মাধ্যমে প্রকৃত মহাপুরুষদের জীবন দর্শন মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাদের জন্মদিবস পালন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যারা সমাজ ও দেশের জন্য আত্মবলিদান করেন তাদেরকেই ইতিহাস মনে রাখেন। দীনদয়াল উপাধ্যায় তেমনি একজন ছিলেন।
তিনি দেশে হিন্দু ধর্ম প্রতিষ্ঠার বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু অন্য কোন ধর্মকে আঘাত দিয়ে নয়। তাঁর মতবাদ সংহতি, জাতীয়তাবোধ, ভাতৃত্ববোধকেই প্রাধান্য দেয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি. কে চক্রবর্তী।