কদমতলায় আগর ট্রেড সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে বন দপ্তর

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২০ আগস্ট।। আগর রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বনজ অর্থকরী সম্পদ। রাজ্যে আগর বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে উত্তর ত্রিপুরা জেলার কদমতলায় আগর ট্রেড সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে বন দপ্তর।

আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক কে এস শেঠি একথা জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরও জানান, রাজ্যে বন ও বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় বন দপ্তর বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ণ করছে।

এরমধ্যে রয়েছে সিপাহীজলা চিড়িয়াখানার সংস্কার, পতিছড়িতে বাইসন কনজারভেশন রিজার্ভ স্থাপন, বকাফা, পেঁচারথল এবং সিপাহীজলাতে ৩টি অ্যানিমেল রেসকিউ সেন্টার স্থাপন, মুঙ্গিয়াকামীতে এলিফেন্ট ক্যাম্প স্থাপন, রোয়া মুঙ্গিয়াকামী এবং খোয়াইয়ে ন্যাচার ইন্টারপ্রেটেশন সেন্টার স্থাপন, হাতিপাড়াস্থিত অক্সিজেন পার্কে আর্ট অর্কেডেরিয়াম স্থাপন। তিনি জানান, নগর এলাকার সবুজায়ন ও জৈব বৈচিত্র্য রক্ষায় বন দপ্তর নগর বন যোজনা কর্মসূচি রূপায়ণ করছে। এই প্রকল্পে আগরতলা পুরনিগম এলাকায় এবং শালবাগান এলাকায় গাছের চারা লাগানো হয়েছে। এছাড়াও এই প্রকল্পে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ধর্মনগর, কুমারঘাট, তেলিয়ামুড়া এবং উদয়পুরে ৪টি কার বনের উদ্বোধন করা হয়েছে।

প্রতিটি নগর বনের জন্য ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে।সাংবাদিক সম্মেলনে বন দপ্তরের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজ্যের বনজ সম্পদকে কেন্দ্র করে রাজস্ব আয়ের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। বনদপ্তর সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, রাজ্যে মোট বনাঞ্চল রয়েছে ৭৭২১৫২ বর্গকিমি যা রাজ্যের মোট ভৌগোলিক আয়তনের ৭৩.৬৪ শতাংশ।

রাজ্যে বর্তমানে ৮টি ফরেস্ট ডিস্ট্রিক্ট, ১৭টি ফরেস্ট সাব ডিভিশন, ৪টি অভয়ারণ্য, ৫৯টি ফরেস্ট রেঞ্জ এবং ২৮৩টি ফরেস্ট বিটস রয়েছে। প্রধান মুখ্য বনসংরক্ষক জানান, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন ক্যাম্পা, এনএপি, রেগা ইত্যাদি প্রকল্পের অর্থানুকূল্যে প্রতিবছরই বন দপ্তর বনায়নের কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। তিনি তথ্য সহকারে জানান, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে রাজ্যে ৮৮৮৯.৭১ হেক্টর বনায়ন করা হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের জুলাই মাস পর্যন্ত ১৫৬৩.৫ হেক্টর বনায়ন করা হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক জানান, নার্সারী কর্মসূচিতে দপ্তর ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ৫৩ লক্ষের উপর চারা উৎপাদন করেছিল এবং ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের জুলাই মাস পর্যন্ত সাড়ে ৬ লক্ষ চারা উৎপাদন করা হয়েছে। এছাড়া দপ্তর ইচ্ছুক সুবিধাভোগীদের মাধ্যমে নার্সারি তৈরি করে চারা উৎপাদনের কর্মসূচি রূপায়ণ করছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে দপ্তর ২২৫ জন সুবিধাভোগীর মাধ্যমে মোট ৬ লক্ষ ৩৪ হাজার চারা উৎপাদন করেছে।

এছাড়াও ২০২২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ২ লক্ষ চারা উৎপাদন করা হয়েছে।সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক জানান, রাজ্যের জনগণের জলের প্রয়োজন মেটাতে, সেচ, ভূগর্ভস্থ জলের পুনরুদ্ধার, ভূমিক্ষয় রোধ এবং মাছ চাষের সহায়তার লক্ষ্যে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে চেকড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে রাজ্যে ৪২১টি চেকড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে।

২০২২-২৩ অর্থবর্ষে আরও ৬২৭টি চেকড্যাম নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে দপ্তর। প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক জানান, রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বৃক্ষরোপণের উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে স্কুল নার্সারি যোজনায় নির্বাচিত প্রতিটি বিদ্যালয়ে ১,০০০টি করে চারা রোপণের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়কে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে।

প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক জানান, মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায় ২০২১-22 অর্থবর্ষে যোগ্য সুবিধাভোগীদের মধ্যে ৯ লক্ষ ২৮ হাজার চারা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও এই প্রকল্পে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের জুলাই মাস পর্যন্ত সুবিধাভোগীদের মধ্যে ৪ লক্ষ ৩৪ হাজার চারা বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি জানান, বন দপ্তরের কর্মী, সাধারণ জনগণ, অন্যান্য দপ্তরের কর্মী, জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য, বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে গণ বৃক্ষরোপণ অভিযানের অঙ্গ হিসেবে মাত্র ২ মিনিটে ৪৮ হাজার ৫৭৬টি চারা রোপণ করা হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের ২৮ জুন, ২০২২ গণ বৃক্ষরোপণ অভিযানের মাধ্যমে ৫ মিনিটে ১ লক্ষ ২ হাজার ২৩০টি চারা রোপণ করা হয়েছে।

তিনি জানান, আজাদি কা অমৃত মহোৎসব পালনের অঙ্গ হিসেবে বন দপ্তর র‍্যালি, ফটো প্রদর্শনী এবং বিভিন্ন ওয়াইল্ড লাইফ ফেস্টিভেলের আয়োজন করেছে। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও সিসিএফ কে শশীকুমার উপস্থিত ছিলেন।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *