স্টাফ রিপোর্টার, কমলপর, ১৮ আগস্ট।। ছাত্রছাত্রীদের শুধু রাজ্যের নয় দেশের সুনাগরিক হতে হবে। আজ কমলপুরে দুটি বিদ্যালয়ের নতুন দ্বিতল ভবনের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। মুখ্যমন্ত্রী আজ প্রথমে কমলপুর সরকারি ইংরেজি মাধ্যম দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় এবং পরে দুর্গাচৌমুহনি ব্লকের অন্তর্গত বামনছড়া ইংরেজি মাধ্যম দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের নতুন দ্বিতল ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করেন।
দুটি অনুষ্ঠানেই উপস্থিত ছিলেন খাদ্য ও জনসংভরণ মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব, বিধায়ক পরিমল দেববর্মা, বিধায়ক স্বপ্না দাস (পাল) এবং ধলাই জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা গোভেকার ময়ূর রতিলাল। উদ্বোধকের ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বলেন, স্বাস্থ্য, কৃষির সঙ্গে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে চলেছে সরকার। ২০১৮ সালের পর শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নতিসাধনে বিভিন্ন প্রকল্প নতুনভাবে হাতে নিয়ে বাস্তবায়িত করেছে সরকার।
তিনি শিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন- বছর বাঁচাও, সুপার থার্টি, নতুন দিশা, সক্ষম ত্রিপুরা সহ আরও অন্যান্য প্রকল্পের জন্য শিক্ষা দপ্তরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, কোভিডকালীন সময়ে ঘরে বসে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য “বন্দে ত্রিপুরা” নামক চ্যানেল চালু করা হয়েছিল, যা ছিল একটি বিশেষ উদ্যোগ। এছাড়া টেট পরীক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য দ্বিতীয় বিকল্প ভাষা হিসেবে ককবরককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ধলাই জেলার ৬,৪৭৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩,২৪৯টি বিদ্যালয়ে এলপিজি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এটি একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষণা অনুযায়ী রাজ্যেও ১০০টি বিদ্যালয়কে বিদ্যাজ্যোতি বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়েছে এবং এই বিদ্যালয়গুলিকে সার্বিকভাবে উন্নত করার কাজ চলছে।
মুখ্যমন্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিদ্যালয়কে মন্দিরের মত ভাবতে হবে, শিক্ষক শিক্ষিকাদের শ্রদ্ধা, সম্মান করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষক শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পড়াশোনার পদ্ধতি এবং বিষয় ও গুণগতভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই শিক্ষক শিক্ষিকারা যেন নতুন নতুন জিনিস, বিষয় যেগুলি আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে জড়িত সেইসব বিষয়ে প্রস্তুত হয়ে বিদ্যালয়ে পাঠদানে ব্রতী হন।
মুখ্যমন্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন যে, পড়াশোনার পাশাপাশি তারা যেন খেলাধুলা, যোগাভ্যাস করে। কারণ খেলাধুলা, যোগায় শরীর, মন ও মস্তিষ্কের চেতনা এবং সক্ষমতা বাড়ে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়কে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলেই বিদ্যালয়ের নতুন দ্বিতল ভবন নির্মাণ সার্থক হবে।
কমলপুর ইংরেজি মাধ্যম দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব দুই বছরের মধ্যে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার জন্য শিক্ষা দপ্তর এবং গ্রামোন্নয়ন দপ্তরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, কমলপুর মহকুমায় শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য রাজ্য সরকার বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে কমলপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে স্নাতক স্তরের কোর্স এবং অন্যদিকে পিওর সায়েন্সে ও পাশ কোর্স চালু হয়েছে।
তিনি বলেন, এই বছর ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম স্থানাধিকারী দশ জনের মধ্যে তিনজনই কমলপুরের। বামনছড়া ইংরেজি মাধ্যম দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের উদ্বোধনে বিধায়ক স্বপ্না দাস (পাল) বলেন, সুরমা এলাকায় ইংরেজি মাধ্যম একটি বিদ্যালয়ের সূচনা এবং এক বছরের মধ্যে নতুন দ্বিতল ভবন নির্মাণ বিশেষ সাফল্য।
এইজন্য তিনি রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং আগামীদিনে এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন। দুটি অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ধলাই জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা গোভেকার ময়ূর রতিলাল।
প্রসঙ্গত, কমলপুর ইংরেজি মাধ্যম দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের নতুন দ্বিতল ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৫টি অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ, প্রধান শিক্ষকের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। একতলায় ৩টি অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ, বায়োলজি ল্যাব, রিসোর্স সেন্টার নির্মাণ করা। হয়েছে। এই নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৪০ হাজার ৯৩৭ টাকা।
বামনছড়া ইংরেজি মাধ্যম দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের নবনির্মিত দ্বিতল ভবনে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৪টি অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ এবং একতলায় ১টি লাইব্রেরি ঘর, ১টি বিজ্ঞান বিষয়ক ল্যাব, ১টি কম্পিউটার রুম নির্মিত হয়েছে। এই নির্মাণ কাজে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ২৭ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬১৩ টাকা।