স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৫ আগস্ট।। নাগরিক পরিষেবায় স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ডিজিটাইজেশনের উপর সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়েছে। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন দপ্তরের পরিষেবায় ডিজিটাইজেশন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাজ্যের তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তর।
আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানান তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের প্রধান সচিব পুনীত আগরওয়াল। সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের প্রধান সচিব রাজ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের মাধ্যমে রূপায়িত বিভিন্ন কর্মসূচির অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। সাংবাদিক সম্মলনে প্রধান সচিব জানান, রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রী যুব যোগাযোগ যোজনা চালু করেছে।
এই যোজনায় রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থীদের মোবাইল স্মার্ট ফোন কেনার জন্য ৫ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হয়। এই যোজনায় ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ৭,২৭৪ জন এবং ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ৯,৩৭১ জন শিক্ষার্থীকে মোবাইল স্মার্ট ফোন কেনার জন্য ৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে অনলাইনে আবেদন করার শেষ তারিখ হচ্ছে ২০ আগস্ট ২০২২।
প্রধান সচিব জানান, ত্রিপুরাকে হাই স্পিড ইন্টারনেট সংযোগের সাথে যুক্ত করতে উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। স্টেট ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (এসডব্লিওএএন)-এর মাধ্যমে সমস্ত জেলা সদর, টিটিএএডিসি, মহকুমা এবং ব্লক অফিসগুলি পর্যন্ত হাই স্পিড ইন্টারনেট সংযোগের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, ৭৩টি এসডব্লিওএএন-এর আওতায় এলাকায় ব্যান্ড উইথ আপগ্রেড করা হয়েছে।
হাই স্পিড ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (এইচএসডব্লিওএএন) প্রকল্পের অধীনে হাই স্পিড ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের জন্য ৪৫০টি অফিস সংযুক্ত করা হয়েছে।সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরও জানান, রাজ্য সরকার ই-গভর্নেন্সের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম যেমন ডিজিটাল সেবা (ই-ডিস্ট্রিক্ট), স্বাগাত, বেনিফিসিয়ারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (বিএমএস), ই-মিউনিসিপালিটি-এর সহায়তায় ২২৮টি পরিষেবাকে অনলাইনের আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি জানান, রাজ্য সরকারের সমস্ত জনকল্যাণমূলক প্রকল্প সমূহকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার জন্য এনআইসির সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহায়তা তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তর বেনিফিসিয়ারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। রাজ্যে বিনিয়োগের প্রসারে রাজ্য সরকার ত্রিপুরা ডাটা সেন্টার পলিসি, ২০২১ গ্রহণ করেছে। তিনি জানান, এই নীতি রাজ্যের ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান সচিব জানান, ইন্দ্রনগরের আইটি ভবনে একটি অত্যাধুনিক ডাটা সেন্টার স্থাপনের জন্য এনআইএক্সআই-সিএসসি ডাটা সার্ভিসেস লিমিটেডের সাথে একটি মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। তিনি জানান, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই নাগরিকদের সুবিধার্থে সিএম হেল্পলাইন নম্বর ১৯০৫ চালু করেছে। এই নম্বরে এখন পর্যন্ত ১৭,০৫১টি কল গ্রহণ করা হয়েছে।
এরমধ্যে তথ্য জানা সংক্রান্ত বিষয়ক কল ১২,৬৪৫টি, ৪,৩২১টি অভিযোগ সংক্রান্ত কল বিভিন্ন দপ্তরে সমাধানের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং ৩,৬৬৯টি কল সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। তিনি জানান, রাজ্যের ১, ১৭৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ভিলেজ কমিটির মধ্যে ১,১৫৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ভিলেজ কমিটিকে কমন সার্ভিস সেন্টারের আওতায় আনা হয়েছে।
এছাড়াও রাজ্য সরকার বাকি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ভিলেজ কমিটিগুলিকে কমন সার্ভিস সেন্টারের আওতায় আনতে ২৭টি মোবাইল কমন সার্ভিস সেন্টার ভ্যান চালু করা হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান সচিব জানান, ত্রিপুরার সম্ভাব্য স্টার্ট আপ উদ্যোগীদের বিনিয়োগের সুবিধার্থে ত্রিপুরা স্টার্ট আপ ভেঞ্চার তহবিল তৈরি করার জন্য রাজ্য সরকার অনুমোদন দিয়েছে। এরজন্য ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের রাজ্য বাজেটে অর্থের সংস্থানও রাখা হয়েছে।
প্রধান সচিব জানান, টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলিতে উদ্ভাবনী বিভিন্ন বিষয়ের প্রসারে এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিভাদের স্টার্ট আপের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিউ জেনারেশন ইনোভেশন নেটওয়ার্ক (এনজিআইএন) প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ৪টি টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউশনে যথাক্রমে এনআইটি, টিআইটি, টেকনো কলেজ এবং ইকফাইতে এই নিউ জেনারেশন ইনোভেশন নেটওয়ার্ক প্রকল্প রূপায়ণের জন্য ইনকুবেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
প্রধান সচিব আরও জানান, সাইবার থ্রেট মোকাবিলায় রাজ্যে একজন সাইবার সিকিউরিটি অডিটর এবং একজন সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তাছাড়াও তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের আরও বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি নিয়েও আলোকপাত করেন প্রধান সচিব পুনীত আগরওয়াল। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের অধিকর্তা নরেশ বাবু।