অনলাইন ডেস্ক, ২ জুন।। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ধর্ষণের অপরাধের সংজ্ঞা লিঙ্গনিরপেক্ষ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করল কেরালা হাইকোর্ট।
দেশটির গণমাধ্যম জানায়, সম্প্রতি এক বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় সন্তান বাবা না মা কার কাছে থাকবে তা নিয়ে সওয়ালের সময়ে বাবার বিরুদ্ধে পুরোনো ধর্ষণের অভিযোগের কথা ওঠে আসে। সেই প্রসঙ্গেই এ মন্তব্য।
ওই সময় বাবার কৌঁসুলি জানান, তার মক্কেল ওই মামলায় জামিন পেয়েছেন। বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সম্পর্ক তৈরির ভুয়া অভিযোগ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে।
তখনই বিচারপতি মহম্মদ মুস্তাক বলেন, ‘ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ নম্বর ধারা (যাতে ধর্ষণের সংজ্ঞা রয়েছে) লিঙ্গনিরপেক্ষ নয়। যদি একজন পুরুষ একজন নারীকে বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সম্পর্ক করেন, তবে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা যায়। কিন্তু কোনো নারী একই কাজ করলে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়েরের পথ নেই। এটা কেমন?’
মুস্তাকের দেওয়া এক সাম্প্রতিক রায়েও এই মতের প্রতিফলন দেখা যায়। ওই রায়ে তিনি জানান, যদি কোনো নারীর স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয় তবেই বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে ধরা হবে।
আরও জানান, ভারতীয় দণ্ডবিধি ধর্ষণকে লিঙ্গনিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখে না। ফলে এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর মধ্যে কার পক্ষে অন্যের ওপরে প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব ছিল তা বিচার করে দেখতে হবে।
বিচারপতি মুস্তাকের মতে, ‘আইনে একটা অলীক ধারণা করা হয়েছে যে পুরুষই সব সময়ে প্রভাব বিস্তার করার পক্ষে উপযুক্ত স্থানে থাকবেন।’
বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ আইনকে সব সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য সমান করে তোলারও সমর্থক বিচারপতি মুস্তাক। সম্প্রতি তিনি এক রায়ে বৈবাহিক সম্পর্কে ধর্ষণকে নারীর পক্ষে বিচ্ছেদের জন্য উপযুক্ত আইনি কারণ হিসেবে মান্যতা দিয়েছেন।
ধর্ষণের সংজ্ঞাকে লিঙ্গনিরপেক্ষ করা নিয়ে আগেও আরজি পেশ হয়েছে দেশের নানা আদালতে। এক মামলায় ২০১৭ সালে কেন্দ্রকে নোটিস পাঠিয়ে তাদের অবস্থান জানতে চায় দিল্লি হাইকোর্ট। ২০১৯ সালে কেন্দ্র হাইকোর্টে জানায়, ধর্ষণের শিকার হন মূলত নারীরাই। তাই তাদের কথা মাথায় রেখে তৈরি ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন চালু রাখা প্রয়োজন। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টেও এই বিষয়ে আবেদন পেশ হয়। কিন্তু শীর্ষ আদালত হস্তক্ষেপ করতে রাজি হয়নি।