অনলাইন ডেস্ক, ২১ মে।। টানা কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত অসম। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ১৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ডিমা হাসাও ও হোজাই, কাছাড় সহ অসমের একাধিক জেলা বিধ্বংসী বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টিতে প্লাবিত যমুনামুখ জেলা। অসমের দুটি গ্রামের ৫০০টিরও বেশি পরিবার রেলপথে তেরপলিনের চাদর দিয়ে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যায় রেলওয়ে ট্র্যাকটি অনেক উঁচু জমিতে হওয়ার জন্য এখনও এখানে বন্যার প্রভাব পড়েনি। চাংজুরাই ও পাটিয়া পাহার গ্রামের দুটি গ্রাম সম্পূর্ণ জলের তলায়। সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব দুটি গ্রাম। গ্রামবাসীদের অভিযোগ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পাচ্ছে না। দীর্ঘ পাঁচদিন তারা এইভাবেই জীবন কাটাচ্ছে।
ক্রমশই অসমের পরিস্থিতি ক্রমশই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। অবিরাম বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত ২৯টি জেলার ২৫৮৫ টি গ্রামের ৮ লক্ষ মানুষ। ভূমিধসে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।
করুণ কাহিনি ফুটে উঠেছে পৈথা গ্রামে মানোয়ারা বেগমের জীবনে। একটি অস্থায়ী শেড বানিয়ে কোনও রকমে রয়েছেন তিনি। দুর্যোগ থেকে বাঁচতে আরও চারটি পরিবার তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে। কয়েকদিন ধরে খাবার ছাড়াই রয়েছে তারা। মানোয়ারা বেগম জানিয়েছেন, গত তিনদিন ধরে তারা খোলা আকাশের নীচে আছেন তারা। টাকা নেই, ধার করে তারপলিন কিনে শেড বানিয়ে একসঙ্গে পাঁচটা মিলে আছেন তারা। তাদের কোনও রকম গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নেই। অপর ভুক্তভোগী বিউটি বরদলুই। বন্যায় ভেসে গিয়েছে চাংজুরাই গ্রামের বাড়ি। ভিটেমাটি হারিয়ে তেরপলের নিচে বাস করছেন তিনি। বিউটি বরদলুই জানিয়েছেন, চাষের সব ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কি খাব জানি না। জীবণ ধারণ মুশকিল হয়ে পড়েছে। বিউটি বরদলুই পরিবারের সদস্য সুনন্দা দলুই জানিয়েছেন, বিশুদ্ধ পানীয় জলের আকাল, কোনও বেলার একবেলা ভাত জুটছে, কোনবেলা তাও জুটছে না। গত কয়েকদিন ধরে চিড়ে খেয়ে আছি।
নাসিবুর রহমান জানিয়েছে, গত চারদিন পরে এই প্রথম সরকারি তরফে কিছু সাহায্য মিলেছে। তবে সবাই পায়নি। সরকারের তরফ থেকে অল্প কিছু চাল, ডাল তেল দেওয়া হয়েছে। অনেকে তাও পায়নি।
দুর্যোগপূর্ণ এলাকা থেকে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে সেনা, আধাসামরিক বাহিনী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। এখন পর্যন্ত ২১,৮৮৪ জনকে নৌকা, হেলিকটার করে উদ্ধার করার কাজ চলছে। দুর্গতদের সাহায্যে বিশেষ ট্রেন চালাচ্ছে রেল। রেলের বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিক, কর্মচারীরা লাইন মেরামতি বা বাকি কাজের জন্য যাওয়ার পাশাপাশি বন্যা দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে বিশেষ ট্রেন চালাতে শুরু করল উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই বিশেষ ট্রেন চালাবে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বৃষ্টি না থামায় উদ্ধারকার্য ব্যাহত হচ্ছে।
উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে হোজাই জেলা কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিয়ে, লামডিং ডিভিশনে সম্প্রতি বন্যা আক্রান্ত মানুষদের ত্রাণ ও উদ্ধারের জন্যে স্পেশাল ট্রেন চালিয়েছে৷ দুর্গত মানুষের জন্য খাদ্য ও অত্যাবশকীয় সামগ্রী বহনকারী তিনটি কামরার এই বন্যা ত্রাণ ট্রেনটি হোজাই থেকে যমুনামুখ পর্যন্ত চলাচল করছে। এই অংশেই রেললাইনের পাশে উঁচু জায়গায় তাঁবু তৈরি করে বসবাস করছেন একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা।