অনলাইন ডেস্ক, ৭ মে।। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার মুখে এবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের গোপন ‘প্রেমিকা’ এলিনা কাবায়েভা। ইউক্রেনে হামলার জেরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন এক নিষেধাজ্ঞার তালিকা প্রকাশ করতে চলেছে। তাতেই রয়েছে কাবায়েভার নাম, যিনি রাশিয়ার একজন রাজনীতিবিদ, মিডিয়া বস এবং সাবেক অলিম্পিক জিমন্যাস্ট। যার গর্ভে পুতিনের কয়েকটি সন্তান জন্ম নিয়েছে বলেও গুজব রয়েছে।
তবে এই প্রস্তাব এখনও খসড়া আকারেই রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক সূত্রের দাবি, এই তালিকায় নতুন কারও যেমন যুক্ত হতে পারে, তেমনই কারও নাম বাদও পড়তে পারে। শেষ খবর পর্যন্ত এখনও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়নি বলেই জানা গিয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞার সূত্রেই ফের আলোচনায় উঠে আসছে কাবায়েভার নাম? ১৯৮৩ সালে জন্ম জিমন্যাস্ট এই তরুণীর। গত এক দশক ধরেই পুতিনের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে নানা গুঞ্জন শোনা গিয়েছে। যদিও পুতিন এই সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বারবার।
২০০৮ সালে শোনা যায় পুতিন তার স্ত্রী লুডমিলাকে ডিভোর্স দিয়ে কাবায়েভাকে বিয়ে করবেন। কিন্তু সেই সময় পুতিন ও কাবায়েভা দুজনেই এই অভিযোগ উড়িয়ে দেন। যদিও এর পাঁচ বছর পরে পুতিন ও লুডমিলা ঘোষণা করেন, তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হতে চলেছে। তবে এরপরও কাবায়েভার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেননি পুতিন। আজও তাই তাদের সম্পর্ক রহস্যের কুয়াশাতেই ঢাকা রয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা করে রাশিয়া। তারপর থেকেই রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো। কয়েক সপ্তাহ আগেই পুতিনের দুই মেয়ের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আমেরিকা। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের উপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এবার তালিকায় জুড়তে পারে কাবায়েভার নামও।
গত মার্চ মাসে অনলাইনে কাবায়েভার বিরুদ্ধে একটি অনলাইন পিটিশনও করা হয়েছিল। যেখানে তাকে সুইজারল্যান্ড থেকে বের করে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল।
১৯৮৩ সালে জন্মগ্রহণকারী কাবায়েভা মাত্র ৪ বছর বয়সে অলিম্পিক জিমন্যাস্ট হিসেবে ক্রীড়া জগতে নাম লেখান। একজন জিমন্যাস্ট হিসেবে তিনি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি এতো সহজেই নিজের শরীকে বাঁকিয়ে-পেঁচিয়ে শারীরিক কসরত করতে পারতেন যে তাকে রাশিয়ার সবচেয়ে নমনীয় শরীরের নারী বা মোস্ট ফ্লেক্সিবল ওমেন অফ রাশিয়া খেতাব দেওয়া হয়।
১৮টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ মেডেল এবং ২৫টি ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ মেডেল জয় করে কাবায়েভা রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ২০০৭ সালে পুতিনের দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি থেকে রুশ সংসদের নিম্নকক্ষের এমপি হন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি পুতিনের দলের সংসদ সদস্য ছিলেন।
২০১৪ সালে কাবায়েভা রাশিয়ার ন্যাশনাল মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন। রাশিয়ার সব রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত হত এই গ্রুপ থেকে। এই পদে থেকে তিনি একজন ধনী নারী হয়ে উঠেন। বছরে তার আয় হয় ১২ মিলিয়ন ডলার।
পুতিনের সঙ্গে তার প্রথম দেখা কবে হয়েছিলেন তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে একজন নেতৃস্থানীয় অলিম্পিয়ানের জন্য একটি দেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। ২০০১ সালে পুতিনের সঙ্গে তোলা তার একটি ছবি রয়েছে, যেখানে পুতিন তাকে অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ নামে শীর্ষ রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত করছিলেন।
গুজব রয়েছে তাদের দুজনের সন্তানও রয়েছে। এক সুইস সংবাদপত্র জানিয়েছে যে, কাবায়েভা ২০১৫ সালে লুগানো লেকের কাছে একটি বিশেষ ক্লিনিকে একটি ছেলে এবং ২০১৯ সালে একই জায়গায় আরেকটি ছেলের জন্ম দেন। তবে সানডে টাইমস এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ২০১৯ সালে মস্কোতে তার যমজ সন্তান হয়েছিল। যদিও তার কত সন্তান আছে সে বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দপ্তর ক্রেমলিন এমন খবর অস্বীকার করেছে। ২০১৫ সালে পুতিনের মুখপাত্র বলেছিলেন, ‘ভ্লাদিমির পুতিনের একটি শিশুর জন্মের তথ্য বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়’।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানো হয়।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কাবায়েভার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে অনিচ্ছুক ছিল। কারণ তারা ভয় পাচ্ছিল এটা পুতিনের জন্য ‘খুব বেশি ব্যক্তিগত আঘাত’ বলে বিবেচিত হতে পারে এবং তা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
তবে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতেও পারে। গত মাসে যখন হোয়াইট হাউসকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কেন কাবায়েভা তাদের সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নেই, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব উত্তর দিয়েছিলেন ‘কেউ নিরাপদ নয়’।