অনলাইন ডেস্ক,৩০ এপ্রিল।। টুইটারের শীর্ষ কর্মকর্তা ও বোর্ড সদস্যদের বেতন কমানোসহ টুইট থেকে অর্থ উপার্জনের কথা ভাবছেন ইলন মাস্ক।
সম্প্রতি টেসলা ও স্পেস এক্সের প্রতিষ্ঠাতা সিইও ইলন মাস্ক প্রায় ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে টুইটারে মালিকানা কিনে নিয়েছেন।
শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট ৩ সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, মাস্ক টুইটারের শীর্ষ কর্মকর্তা ও বোর্ড সদস্যদের বেতন কেটে প্রতিষ্ঠানের খরচ কমাবেন এবং টুইট থেকে অর্থ উপার্জনের নতুন উপায় বের করবেন।
গত ১৪ এপ্রিল টুইটার কেনার প্রস্তাব দেওয়ার পর ২১ এপ্রিল ব্যাংকগুলোকে নানান প্রতিশ্রুতি দেন মাস্ক। বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিশ্রুতিগুলো টুইটারের বোর্ডের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এগুলোর ওপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে।
মাস্ক ব্যাংকগুলোকে যুক্তি দিয়ে বোঝান, ঋণের অর্থ পরিশোধের জন্য টুইটারের যথেষ্ট পরিমাণ রাজস্ব আয়ের সক্ষমতা আছে। টুইটার কেনার জন্য ইতোমধ্যে তিনি ১৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিশ্চিত করেছেন।
টেসলার শেয়ারের বিপরীতে আরও সাড়ে ১২ মিলিয়ন ডলার জোগাড়ের বিষয়টিও নিশ্চিত। বাকি অর্থ তিনি নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করতে রাজি হয়েছেন।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, ব্যাংকের কাছে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়ার চেয়ে টুইটারকে ভবিষ্যতে কোন পথে নিয়ে যেতে চান, সে বিষয়ে জানান। সংস্থাটির মালিকানা পাওয়ার পর তিনি ঠিক কোন খাতে খরচ কমাবেন, তা এখনও পরিষ্কার নয়। এ ছাড়াও, ব্যাংকের কাছে জমা দেওয়া পরিকল্পনায় বিস্তারিত বর্ণনার অভাব আছে।
মাস্ক টুইটারের পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের বেতন কমানোর বিষয়ে টুইট করেন এবং দাবি করেন, এতে ৩ মিলিয়ন ডলার খরচ বাঁচবে।
তিনি মনে করেন, টুইটারের মুনাফার হার ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা ও পিনটারেস্টের তুলনায় বেশ কম। তার যুক্তি—টুইটারের খরচ কমিয়ে একে আরও উপযোগী করা সম্ভব।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাস্ক ব্যাংকের কাছে কর্মী ছাঁটাইয়ের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে এক সূত্র জানায়, এ বছরের শেষ নাগাদ টুইটার পরিচালনার দায়িত্বভার নেওয়ার আগে কর্মী ছাঁটাই নিয়ে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।
সূত্র আরও জানায়, মাস্ক টুইটারের আর্থিক পরিস্থিতি ও কর্মীর সংখ্যা সংক্রান্ত গোপন তথ্য না জেনেই প্রতিষ্ঠানটিকে কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সূত্রের দাবি, মাস্ক টুইটারে এমন কিছু ফিচার যোগ করতে চান, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব আয় আরও বেড়ে যাবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত অথবা ভাইরাল হওয়া টুইট থেকে অর্থ উপার্জনের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
তৃতীয় পক্ষের কোনো ওয়েবসাইট যদি কোনো ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টের টুইট বার্তার উদ্ধৃতি দিতে বা এমবেড করতে চায় তাহলে সে ক্ষেত্রে টুইটারকে ফি দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও মাস্ক জানিয়েছেন।
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, মাস্কের সম্পদের পরিমাণ ২৪৬ বিলিয়ন ডলার। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ব্যাংকগুলোর সিন্ডিকেটেড ঋণের বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের কাছে বিপণনের ক্ষেত্রে তিনি সহায়তা করবেন এবং সে সময় টুইটারের ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক পরিকল্পনার আরও বিস্তারিত জানাবেন।
এক সূত্র জানান, মাস্ক টুইটারের জন্য নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জোগাড় করে রেখেছেন। তবে তার নাম প্রকাশ করতে সূত্রটি রাজি হননি।
টেসলা ও স্পেস এক্সের মালিক মাস্ক ব্যাংকগুলোকে আরও বলেছেন যে, তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির জন্য আরও শিথিল কন্টেন্ট মডারেশন নীতিমালা তৈরির বিষয়ে আগ্রহী। তা আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তৈরি করা হবে।
টুইটারের জন্য পাওয়া ১৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রতিষ্ঠানটির ২০২২ সালের প্রাক্কলিত আয়ের চেয়ে ৭ গুণ বেশি। কয়েকটি ব্যাংক একে অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছে।
আরও কয়েকটি ব্যাংক ঋণ দিতে আগ্রহী হয়নি। তাদের আশঙ্কা, মাস্কের খেয়ালি আচরণের কারণে টুইটার থেকে অনেক প্রতিভাবান কর্মী বের হয়ে যেতে পারে। এতে সার্বিকভাবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
টুইটারের এক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।