ফুল চাষেই আত্মনির্ভরতার পথ খুঁজে নিচ্ছেন সঞ্জিত ও ভিক্টররা

৷৷ কাকলি ভৌমিক ।। রাজ্য সরকার কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা এবং তাদের আত্মনির্ভর করার জন্য অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। রূপায়িত হচ্ছে একের পর এক উন্নয়নমুখী প্রকল্প। রাজ্য সরকারকে পাশে পেয়ে হাসি ফুটছে লক্ষ্মীবিল গ্রামের বহু ফুলচাষীর মুখেও। রাজ্য সরকারের উদ্যানপালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তর থেকে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সহায়তা পেয়ে আরও অনেকের মতো স্বনির্ভর হয়েছেন বিশালগড় মহকুমার লক্ষ্মীবিল গ্রাম পঞ্চায়েতের একজন সফল ফুলচাষী সঞ্জিত দেবনাথ। বিশালগড় থেকে প্রায় তিন-চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লক্ষ্মীবিল গ্রাম। যা ফুল গ্রাম বা আবির গ্রাম নামেও বহুল পরিচিত। এ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই ফুলচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার সাথেও জড়িত রয়েছে কিছু পরিবার। তবুও এ গ্রামে ফুল চাষই সকলের জীবিকা নির্বাহের প্রধান অবলম্বন। গ্রামের ছোট বড় বিভিন্ন ফুল চাষীদের কাছে সঞ্জিত দেবনাথ এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা। কথা প্রসঙ্গে সঞ্জিত দেবনাথ জানান, বর্তমানে ফুলচাষ করে তিনি বছরে আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা রোজগার করছেন। তার বর্তমানে ৪টি বড় বাগান রয়েছে রকমারি ফুল চাষের।

২০২০-২১ অর্থবর্ষে তিনি উদ্যানপালন ও ভূমি সংরক্ষণ কার্যালয় থেকে মিশন ফর ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট অব হর্টিকালচার প্রকল্পে ফুলচাষের জন্য ১০ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছেন। এছাড়াও ২০২১ ২২ অর্থবর্ষে ৪০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন ফুলের বীজ কেনা সহ বাগান পরিচর্যা করার জন্য। এছাড়া কোভিড মহামারি চলাকালীনও আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন। এছাড়াও কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর থেকে সময়ে সময়ে কারিগরী সহায়তা সার, বীজ, প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় পরামর্শ থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। সরকারি সাহায্য পেয়ে ফুলচাষী সঞ্জিত দেবনাথ আপ্লুত। কথা প্রসঙ্গে সঞ্জিত দেবনাথ জানালেন, ফুলচাষ করে স্বনির্ভর হওয়াই আমার একমাত্র স্বপ্ন। ভবিষ্যতে ফুল চাষ আরও সম্প্রসারিত করার ইচ্ছে রয়েছে।

তিনি জানান, প্রায় এগারো বছর আগে থেকে ফুলচাষ করতেন। অভাব অনটনের সংসারে ফুলচাষ করে কোনওভাবে সংসার চালাতেন মা, স্ত্রী ও এক পুত্র সন্তানকে নিয়ে। স্বউদ্যোগেই শুরু করেছিলেন ফুলচাষ। কিন্তু তখন খুব একটা রোজগার হতো না। তিনি জানালেন, বিগত চার বছর ধরে তিনি রাজ্য সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ এবং উদ্যানপালন ও ভূমি সংরক্ষণ কার্যালয়ের মাধ্যমে অনেক সুযোগ সুবিধা সহ আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। ফুলচাষের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পুরস্কারও পেয়েছেন। তিনি আরও জানান যে, ২০২২ সালে গ্ল্যান্ডুলাস ফুলের বীজ কেনার জন্য তিনি উদ্যানপালন ও ভূমি সংরক্ষণ কার্যালয় থেকে আর্থিক সাহায্য পান। ফেব্রুয়ারি মাসে একটি গ্লাডুলাস ফুল ৪০ টাকা করে বাজারে বিক্রি করেছেন। এতে মুনাফা অর্জন করেছেন প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও ৪টি বড় বাগানে প্রতিদিন ৩ জন শ্রমিক নিয়োগ করেছেন বাগান পরিচর্যা করার জন্য। প্রতিদিন তার বাগান থেকে আগরতলা, উদয়পুর সহ সিপাহীজলার বিভিন্ন দোকানে রকমারি ফুল যোগান দেন।

তিনি দৃঢ়তার সাথে জানান, কোনওরকম বড় ব্যবসা ও চাকরি তার আর দরকার নেই। ফুলচাষই তাকে স্বনির্ভরতার সঠিক দিশা দেখিয়েছে। সে এখন একজন স্বনির্ভর এবং সফল ফুলচাষী। সঞ্জিত দেবনাথ নিরলস প্রচেষ্টা, ধৈর্য্য এবং পরিশ্রমের ফলে ফুলগ্রামে আজ প্রতিষ্ঠিত ফুলচাষী। বিমল দেবনাথ, ভিক্টর দেবনাথের মতো অনেকের কাছেই ফুলচাষী সঞ্জিত দেবনাথ এক অনুপ্রেরণা ও আত্মনির্ভরতার দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *