কোভিডে অভিভাবকহীন প্রজন্মের জন্য মানবিক পদক্ষেপ মুখ্যমন্ত্রী বাল সেবা প্রকল্প

।। রাজেশ দেবনাথ।। কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে রাজ্যের যেসব শিশু তাদের মা, বাবা অথবা বৈধ অভিভাবককে হারিয়েছে তাদের কল্যাণে রাজ্য সরকারের যুগোপযোগী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত ‘মুখ্যমন্ত্রী বাল সেবা প্রকল্প’। কোভিড-১৯-এর কারণে মা-বাবাকে হারিয়ে যে সমস্ত শিশুর জীবনে অজানা অন্ধকার ভবিষ্যত নেমে আসতে যাচ্ছিলো তাদের সঠিক দিশা দেখাবে এই প্রকল্প। বলা যেতে পারে কোভিড-১৯ অতিমারীর ফলে যে সকল শিশুর জীবনে আঁধার ঘনিয়ে এসেছিল মুখ্যমন্ত্রী বাল সেবা প্রকল্প তাদের জীবনে নির্ভয়তা দিচ্ছে।
কোভিড- ১৯-এর কারণে পিতামাতা বা বৈধ অভিভাবক হারানো শিশুদের আর্থিক এবং শিক্ষা বিষয়ক সহায়তা করা এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। ত্রিপুরায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী যেসব শিশু কোভিড-১৯ অতিমারীতে তাদের দত্তক নেওয়া পিতামাতাকে হারিয়েছে তারাও এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে। এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত শিশুরা ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে। এ সমস্ত অনাথ শিশুদের দেখভালের জন্য সক্ষম আহনী অভিভাবকদের প্রতিমাসে আর্থিক সহায়তা হিসেবে ৩,৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। আর যে সমস্ত শিশুদের কোনও অভিভাবক নেই তারা ত্রিপুরার যে কোনও চাইল্ড কেয়ার ইনস্টিটিউশনে থাকতে পারবে। এই প্রকল্পের অধীনস্ত মেয়েদের ১৮ বছর পূর্ণ হলে আবেদনক্রমে বিয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকা এককালীন অনুদান দেওয়া হবে।

তাছাড়া এই প্রকল্পের অধীনস্ত সুবিধাভোগী যখন একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হবে অথবা যারা ইতিমধ্যে একাদশ অথবা দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়াশুনা করছে তাদের পড়াশুনার জন্য আবেদনক্রমে ল্যাপটপ বা ট্যাব দেওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে এই প্রকল্পে। তবে যেসব পরিবার স্কিম ফর কম্পেশনেট এমপ্লয়মেন্ট বা বেনিফিট ফর গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ অব ত্রিপুরার অধীনে সুবিধা প্রাপ্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত সেইসব পরিবার এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয় না। কারণ পরিবারটি ইতিমধ্যেই সরকারি চাকরি পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত অথবা শিশুর পিতামাতার যে কোনও একজনের ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে সরকারি চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যুর ফলে পরিবারটি পুরো বেতন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত অথবা সরকারি কর্মচারীর ৫০ বছরের কম বয়সে মৃত্যুর কারণে পরিবারটিতে সরকারি চাকরি পাওয়ার কোনও যোগ্যতা সম্পন্ন সদস্য না থাকায় পরিবারটি ১০ লক্ষ টাকা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জেলা শিশু সুরক্ষা ইউনিটেরও ভূমিকা রয়েছে। এই ইউনিট সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে এই প্রকল্পের সুবিধা মঞ্জুর করার জন্য সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরে সুপারিশ পাঠায় এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ জেলা শিশু সুরক্ষা ইউনিটকে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তর প্রদান করে থাকে। মানবসম্পদ হলো দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সুতরাং শিশুদের সঠিকভাবে বিকশিত না করতে পারলে তা মানবসম্পদের অপচয় যা দেশের অগ্রগতির পথে অন্তরায়। কোভিড-১৯-এ সর্বশান্ত শিশুদের জীবনকে আলোকোভাসিত করে মসৃণ পথে শৈশব অতিবাহিত করে এক সুন্দর ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে মুখ্যমন্ত্রী বাল সেবা প্রকল্প এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তুলতে রাজ্য সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ মুখ্যমন্ত্রী বাল সেবা প্রকল্পও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *