।। মণিমালা দাস ॥ আত্মনির্ভর ব্যক্তি ও আত্মনির্ভর পরিবার গড়ে তুলতে সমস্তরকম সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের সব অংশের মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য বর্তমান সরকার ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য নেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন প্রকল্প ও পরিকল্পনা। তাতে সরকারি চাকরির প্রতি নির্ভরতা অনেকটাই কমেছে। সরকার পাশে থাকায় নিজের উদ্যোগে কিছু করার উৎসাহ পেয়েছে তারা। সরকারি সহায়তায় শূকর পালন করে স্বনির্ভরতার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন পশ্চিম জেলার নিবাসী অভিজিৎ বর্মণ।
আমাদের রাজ্যে শুকরের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই শূকর পালন অনেকের কাছেই জীবিকা হয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে অভিজিৎ বর্মণও একজন। তিনি নিশ্চিত শূকর পালনের মাধ্যমে তিনি ভবিষ্যতে তার আয় বাড়াতে পারবেন। হতে পারবেন একজন স্বনির্ভর ব্যক্তি। সদর মহকুমার ডুকলি ব্লকের আনন্দনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩ নং পাড়ায় বাড়ি অভিজিৎ বর্মণের। বছর ২৭ এর এই যুবক মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। বাবা কমল বর্মণ রাজ যোগালির কাজ করে ছেলেমেয়ে নিয়ে কোনও রকমে সংসার চালিয়েছে। সংসারের হাল ধরার জন্য মাধ্যমিক পাশ করার পর অভিজিৎ রাবার বাগানে শ্রমিকের কাজে যোগদান
করে। মাসিক ৬ হাজার টাকা করে পায়। নিত্যপণ্যের এই বাজারে বাড়তি আয়ের জন্য
অনেক সময় সে রংয়ের কাজও করে থাকে। ২০১৮ সালে নতুন সরকার আসার পর মানুষের জীবন জীবিকার প্রতিটি ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। রাজ্য সরকারের জনকল্যাণমুখী উন্নয়নের জোয়ারে রাজ্যের প্রতিটি মানুষ নিশ্চিত কর্মসংস্থান ও সুস্থ জীবনযাপনের আশ্বাস পেয়েছেন। বেকার যুবক যুবতীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ তৈরির পাশাপাশি প্রত্যেক মানুষের স্বনির্ভরতার জন্যও সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার ফলস্বরূপ অভিজিৎ বর্মণের পরিবারও সরকারি সহায়তা পেয়েছে।
২০২০ সালে আনন্দনগর পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তর থেকে অভিজিৎ বর্মণের মা অর্চনা বর্মণকে ৬টি শূকরের বাচ্চা দেওয়া হয়। সঙ্গে শূকর পালনের জন্য ঘর তৈরি বাবদ ২৪ হাজার টাকা ও শূকরের খাবার দেওয়া হয়। সেই টাকা দিয়ে টিন, তারজালি, ইট, বালি ও সিমেন্ট দিয়ে শূকর পালনের জন্য উপযুক্ত ঘর তৈরি করেন।
নিজের ইচ্ছায় অভিজিৎ বর্মণ এই শুকরগুলি প্রতিপালনে মন দেয়। নিয়মিত টিকাকরণ সহ প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার যোগান দিতে থাকে। এইভাবে ৭ মাস পার হওয়ার পর সে একটি শূকর বিক্রি করে ১৮ হাজার টাকা পায়। বাকি শূকরগুলিকে পালন করতে থাকে। এই শূকরগুলি থেকে ১০টি বাচ্চা জন্ম নেয় এবং ২টি বাচ্চা রেখে সে ৮ টি বাচ্চা বিক্রি করে। প্রতিটি বাচ্চা ৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করে সে ৪০ হাজার টাকা পায়। এক বছরে শূকর পালন করে সে মোট ৫৮ হাজার টাকা বাড়তি আয় করে।