কঙ্গোর জাতীয় অরণ্যে শতাব্দীপ্রাচীন জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ সহিংসতা

অনলাইন ডেস্ক,৬ এপ্রিল।। কঙ্গোর কাহুজি-বিয়েগা জাতীয় অরণ্যে বসবাসকারী শতাব্দীপ্রাচীন বাটওয়া জনগোষ্ঠীর ওপর দেশটির সামরিক বাহিনী ভয়াবহ অত্যাচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচ ভেলে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্টের ভিত্তিতে জানিয়েছে, গত তিনবছর ধরে ওই জনগোষ্ঠীর ওপর ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো এবং জঙ্গলের রেঞ্জাররা চূড়ান্ত অত্যাচার চালাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো এবং জঙ্গলের রেঞ্জাররা ওই জনগোষ্ঠীর মানুষদের লাগাতার ধর্ষণ করছে । গ্রামে ঢুকে তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হত্যা করা হচ্ছে। জঙ্গলের অদূরে একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বহু বাটওয়া জনজাতির মানুষ। তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হার হিম হয়ে যাওয়ার মতোই।

প্রসঙ্গত, ১৯৮০ সালে জার্মানির অনুদানে কাহুজি-বিয়োগা জঙ্গলটিকে জাতীয় অরণ্য হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। গোরিলাদের মুক্তভূমি এই অরণ্য। এই জঙ্গলেই বহু শতাব্দী ধরে বসবাস করে বাটওয়া জনজাতি। এই জনজাতি জঙ্গল নষ্ট করেছে, এমন রিপোর্ট নেই। কিন্তু ১৯৮০ সালে ওই জঙ্গল জাতীয় অরণ্য ঘোষণা হওয়ার আগেই ১৯৭৬ সালে জঙ্গল থেকে প্রায় ছয় হাজার অরণ্যবাসীকে বহিষ্কার করা হয়। তাদের খুন করা হয়, ধর্ষণ করা হয়।

কাহুজি-বিয়েগার অরণ্যবাসী ৩০ বছর বয়সী কিবিবি কালোবা মানবাধিকার সংগঠনগুলিকে জানান, তার পাঁচ সন্তান। জঙ্গলের গ্রামে থাকতেন। একদিন তিনি যখন মাঠে কাজ করছেন, শুনতে পেলেন আক্রমণ হয়েছে। বাড়ি পৌঁছে দেখেন, আর কিছু অবশিষ্ট নেই। ছাই থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। একটি লাঠি নিয়ে ছাইয়ের স্তূপ ঘাঁটতে শুরু করেন তিনি। ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে দুই সন্তানের মাথার খুলি। কঙ্গোর সেনা বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে জীবন্ত মেরে ফেলেছিল তার দুই কোলের শিশুকে।

বাকি তিন সন্তানকে নিয়ে এখন ওই ক্যাম্পে বসবাস করছেন কিবিবি। তিনি জানান, ক্যাম্পে খাওয়ার পানি নেই, খাবার নেই, ওষুধ নেই।

কিবিবির মতো আরো মানুষ বাস করছেন ওই ক্যাম্পে। তারা জানিয়েছেন, সেনারা জঙ্গলে ঢুকে গ্রামের মানুষের হাত কেটে দেয় প্রথমে। তারপর তাদের হত্যা করা হয়। কাটা হাত দেখানো হয় সকলকে। যাতে কেউ আর গ্রামে না থাকে।

প্রশাসনের দাবি, ওই জঙ্গল জাতীয় অরণ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বলেই তাকে মানুষমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে ধর্ষণ এবং খুনের কথা প্রশাসন স্বীকার করেনি। তাদের দাবি, জঙ্গলের মানুষের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, বিকল্প যে ক্যাম্প তৈরি হয়েছে, তা বসবাসের অযোগ্য।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *