।। দেবাশিস পাল।। আগরতলা বইমেলা এবার চল্লিশ-এ পা দিল। ৪০তম আগরতলা বইমেলা শুরু হচ্ছে ২৫ মার্চ থেকে। ১২দিনব্যাপী বইমেলা চলবে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত। দেখতে দেখতে আগরতলা বইমেলা যৌবন অতিক্রম করে যাচ্ছে। যৌবন অতিক্রম করলেও বইমেলা সবসময়ই চিরনবীন। কারণ বই মানুষের চিরন্তন বন্ধু।
বইমেলায় আমরা নানা বইয়ের সন্ধান একসাথে ও একই প্রাঙ্গণে পেয়ে যাই। এখানেই বইমেলার স্বার্থকতা। বইমেলায় যে উদ্দীপনা প্রকাশ পায় তা সার্বজনীন। বইমেলার এমনই আকর্ষণ যে তাকে কেউই উপেক্ষা করতে পারে না।
পৃথিবীতে বইমেলার মত এমন কোনও মেলা নেই যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক প্রাণে সমবেত হন। বইমেলা নিয়ে আমাদের এত গর্বের কারণ হচ্ছে সমবেত জনস্রোত। আগরতলা বইমেলার এটাই অন্যতম শক্তি। বইমেলায় অনেক জনসমাগম হয়। কিন্তু সবাই বই কেনেন না। অনেকেই মেলায় ঘুরে ঘুরে বই পছন্দ করে রাখেন। তারাই হচ্ছেন আগামী দিনের পাঠক ও ক্রেতা। বইমেলায় এটাই সবচেয়ে বড় পাওনা।
বই হচ্ছে সময়ের দর্পণ। এই দর্পণে আমরা ভবিষ্যৎকে দেখবার চেষ্টা করি অতীত ও বর্তমানের প্রেক্ষাপটে। অতীত আর বর্তমানের মধ্যে যোগসূত্র ঘটিয়ে বই ভবিষ্যৎ নির্মাণের অনুপ্রেরণা যোগায়। ছাপা বইয়ের বয়স ৪০০ বছরের উপর। প্রথমে পান্ডুলিপি। তারপর পুঁথি। সময়ের ক্রমবিবর্তনে ছাপা বইয়ের আত্মপ্রকাশ ঘটে এবং শুরুতেই মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে। বইয়ের বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। কারণ বই ইতিহাসকে ধরে রাখে।
মানুষ বার বার ছুটে যায় বইয়ের কাছে। সময়ের ফাঁক ফোঁকরে মানুষ মনের মতো একটি বই পেতে চায়। কী পাই আমরা বইয়ের কাছে? বইয়ের ভূবনে আমরা জীবন খুঁজি, পথ চাই, বন্ধু চাই, ভালোবাসা চাই, জগতের জ্ঞান চাই। বিশ্বের এ-প্রান্তের মানুষ জানতে চায় ও প্রান্তের মানুষের কথা। মানুষের এই অন্বেষণ উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম জীবন তরণীকে খুঁজে বেড়ায়।
প্রতি বছর বইমেলায় অনেক বই অতিথি হয়ে আসে। পুরাতনের সাথে নতুনের সমাবেশ ঘটে। মননের এই মহাবসন্তে মানুষ খুঁজে বেড়ায় ‘ভালো লাগা বই’। আগরতলা বইমেলার পাশাপাশি রাজ্যে এবারই প্রথম সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন জেলায় বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যান্যবারও রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা সদরে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এবার তা অন্যমাত্রা পেয়েছে। এবার সরকারি উদ্যোগে রাজ্যের ৮টি জেলাতেই বইমেলার আয়োজন করা হয়। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি জেলাভিত্তিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। জেলাভিত্তিক এই সমস্ত মেলায় প্রচুর উৎসাহী মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।