অনলাইন ডেস্ক, ১৮ মার্চ।। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বিরোধী রাশিয়ান নাগরিকদের ‘ময়লা ও বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়ে তাদের নির্মূল করার হুমকি দিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বার্তায় পুতিনকে তার স্বভাবসিদ্ধ শীতল কণ্ঠে বলতে শোনা গিয়েছে, রাশিয়া থেকে তিনি কিছু ময়লা এবং বিশ্বাসঘাতকদের বিদায় করতে চান। পুতিন বলেছেন, ‘মুখে ভুল করে মাছি ঢুকে গেলে যে ভাবে ফেলি, ওদেরও ঠিক সে ভাবেই বের করে ফেলব’।
গত তিন সপ্তাহ ধরে ব্যাপক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পুতিনের যুদ্ধ ঘোষণার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পুতিনের ক্ষোভের কারণ সেটিই, বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশ। পুতিনের কথা আগামী দিনে বড় সঙ্ঘাতের অশুভ ইঙ্গিতও পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
টেলিসম্প্রচারিত ওই বক্তৃতায় পুতিন সরাসরি আমেরিকা এবং তার সহযোগী পশ্চিমের দেশগুলোকে দায়ী করেছেন রাশিয়ার দুর্দিনের জন্য। পশ্চিমা শক্তিগুলো রাশিয়াকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন পুতিন।
বৃহস্পতিবারই পুতিনকে ‘যুদ্ধ অপরাধী’ বলে মন্তব্য করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পাল্টা পুতিনের অভিযোগ, আমেরিকা এবং তার সহযোগীদের মদতে রাশিয়ায় থেকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করছেন কেউ কেউ। তাদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ এবং ‘দেশের ময়লা’ বলে মন্তব্য করে পুতিন জানিয়েছেন, তিনি অবিলম্বে রাশিয়াকে ময়লামুক্ত করার অভিযানে নামবেন।
পুতিন বলেছেন, এই দেশদ্রোহীদের সহজেই চেনা যাবে।
আর যখন চেনা যাবে তখন মুখের ভেতর ঢুকে যাওয়া মাছির মতোই রাশিয়া ছুড়ে ফেলবে ওই বিশ্বাসঘাতকদের। বিষয়টিকে রাশিয়ার আত্মশোধনের প্রক্রিয়া বলেও ব্যাখ্যা করেছেন পুতিন। তিনি জানিয়েছেন, এই আত্মশোধনের মাধ্যমেই নিজেদের আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে পারবে রাশিয়া।
ঘটনাচক্রে, দিন কয়েক আগেই রাশিয়ার একটি টিভি চ্যানেলে সংবাদ পরিবেশন থামিয়ে একটি যুদ্ধ বিরোধী বিক্ষোভ দেখানো হয়। যুদ্ধ থামানোর দাবিতে ওই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন রাশিয়ানরাই। তাদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল প্রশাসন মিথ্যে কথা বলছে। ভুল বোঝাচ্ছে। পরে চ্যানেলের এক প্রযোজককেও একই পোস্টার নিয়ে দাঁড়াতে দেখা যায় ক্যামেরার সামনে। পুতিনের লক্ষ্য কি তারাই? এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দিন ধরেই রাশিয়ায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভ ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছে। রাশিয়ানদের একাংশ বরাবরই ইউক্রেনের ওপর পুতিনের সেনা অভিযানের সমালোচনা করে এসেছেন। তাদের অভিযোগ ছিল, পুতিন মুখে ইউক্রেনের সেনাদের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা বললেও কার্যত তারা নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। পুতিনের টেলিভিশন বার্তার পর এবার আশঙ্কা, তবে কি দেশের মানুষের বিরুদ্ধেও এবার নির্মূল অভিযান চালাবেন রুশ প্রেসিডেন্ট?