মহিলা স্বশক্তিকরণের জন্য ত্রিপুরা রাজ্য পলিসি-২০২২ রূপায়ণে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে

 

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৯ মার্চ।। মহিলা স্বশক্তিকরণের জন্য ত্রিপুরা রাজ্য পলিসি-২০২২ এবং মুখ্যমন্ত্রী চা শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্প রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত দুটি গতকাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্য সফরে এসে ঘোষণা করেন। আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এই প্রকল্প দুটির বিষয়ে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমাও উপস্থিত ছিলেন। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য সরকার গৃহীত মহিলা স্বশক্তিকরণের জন্য ত্রিপুরা রাজ্য পলিসি ২০২২-এ যে সমস্ত বিষয় রয়েছে তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, এখন থেকে রাজ্যে যে কোনও সরকারি চাকরি ও আউট সোর্সিং-এর মাধ্যমে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে।

এই পলিসিতে কোনও মহিলা উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যাঙ্ক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ শতাংশ হারে শিক্ষা ঋণ নিতে পারবেন। এছাড়াও এই প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলাদের স্বাস্থ্যবিধি কল্যাণে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩টি মহিলা স্বাস্থ্য ও ওয়েলনেস সেন্টার স্থাপন করা হবে। আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজে মা ও শিশুদের জন্য ১০০ শয্যার সুপার স্পেশালিটি ইউনিট গড়ে তোলা হবে। তাতে ব্যয় হবে ১৯০ কোটি টাকা।

তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আরও জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২টি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ড্রাগ ডিপেন্ডেন্স হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। তাতে ব্যয় করা হবে ৯০ কোটি টাকা। মহিলা মানসিক রোগীদের জন্য ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২টি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট মানসিক রোগের চিকিৎসা হাসপাতাল স্থাপন করা হবে।

মানসিক মহিলা রোগীদের জন্য ২৫ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাফওয়ে হোম স্থাপন করা হবে। তাতে ব্যয় হবে কোটি টাকা। এছাড়াও এই প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি টাকা ব্যয়ে ৩টি বৃদ্ধাশ্রম, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্মরত মহিলাদের জন্য ৪টি নতুন হোস্টেল স্থাপন, ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মহিলাদের জন্য একটি স্টেট রিসোর্স সেন্টার গড়ে তোলা হবে।

তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী জানান, মহিলা স্বশক্তিকরণের জন্য ত্রিপুরা রাজ্য পলিসি ২০২২ রূপায়ণে মোট ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই ফান্ড কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প, বিভিন্ন ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প, বিভিন্ন অনুদান এবং প্রয়োজনে রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তর থেকে প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী চা শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্প বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জানান, রাজ্যের ৫৪টি চা বাগানে এবং ২১টি চা প্রক্রিয়াকরণ ফ্যাক্টরিতে ৭ হাজারের উপর চা বাগান শ্রমিক পরিবার রয়েছে। এই ৭ হাজার চা বাগিচা পরিবারের শ্রমিকদের সুস্থ বসবাসযোগ্য পরিবেশ প্রদানের লক্ষ্যে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পটি রূপায়ণে প্রাথমিকভাবে ৮৫ কোটি টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা নিয়েছে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর।

এই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি তুলে ধরে শ্রীচৌধুরী জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন পরিবারগুলিকে বাড়ি করার জন্য জমি প্রদান করা হবে। যোগ্যতা অনুসারে প্রতিটি পরিবারে প্রায়োরিটি হাউজহোল্ড (পিজি) রেশনকার্ড প্রদান করা হবে, চা শ্রমিক পরিবারে ন্যূনতম বিভিন্ন সুবিধা যেমন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, স্যানিটেশন, পানীয়জল, বিদ্যুৎ ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করা হবে। চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য সমস্ত স্তরের শিক্ষা যেমন, প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক এবং উচ্চতর শিক্ষা প্রদানের সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে।

চা বাগান শ্রমিকদের সামাজিক ভাতা প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। এছাড়াও এই প্রকল্পের মাধ্যমে চা বাগানে কর্মরত শ্রমিক মহিলাদের প্রসূতিকালীন এবং শিশুর স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করা হবে। দিব্যাঙ্গজনদের প্রয়োজনীয় চলন সামগ্রী দেওয়া হবে, মহিলা চা শ্রমিকদের মুক্ত পরিবেশে কাজ করার ব্যবস্থা করা হবে, যোগ্যতা অনুসারে চা বাগান শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হবে এবং ৭ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে খাদ্য দপ্তরের মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব বলেন, ২০১৮ সালে বর্তমান রাজ্য সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সরকারি উদ্যোগে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু করে। এই অর্থবর্ষের খারিফ মরশুমে ২০ হাজার মেট্রিকটন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু কৃষকদের ধান বিক্রি করার উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করে ৩৩ হাজার মেট্রিকটন ধান কিনতে হয়েছে। তিনি জানান, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রাজ্যের কৃষকদের থেকে মোট ১ লক্ষ ৩ হাজার মেট্রিকটন ধান কেনা হয়েছে। তাতে রাজ্যের ৪৪ হাজার কৃষক আর্থিকভাবে উপকৃত হয়েছেন।

খাদ্যমন্ত্রী আরও জানান, বর্তমান রাজ্য সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর রেশনশপের মাধ্যমে ভোক্তাদের ডাল, চিনি, ত্রিপুরেশ্বরী ব্র্যান্ডের চা প্রদান শুরু করেছে। আগামী দিনে সোয়াবিন সহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস প্রদানের বিষয়ে দপ্তর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ডা. প্রশান্ত কুমার গোয়েল এবং সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব চৈতনামূর্তি উপস্থিত ছিলেন।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *