অনলাইন ডেস্ক, ৮ মার্চ।। রাশিয়া, রুশ প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের সঙ্গে অবন্ধুসুলভ আচরণকারী কিছু দেশ ও অঞ্চলের নাম নিয়ে একটি তালিকা করেছে রাশিয়ার সরকার। এই দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। গতকাল সোমবার তালিকাটির অনুমোদন দেয় পুতিন সরকার।
গত ৫ মার্চ এ তালিকার সঙ্গে একটি প্রেসিডেন্টশিয়াল ডিক্রি দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, রাশিয়ার কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ‘অবন্ধুসূলভ আচরণকারী’ দেশ ও অঞ্চলের তালিকার কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ থাকলে তা রুশ মুদ্রা রুবলে পরিশোধ করা যাবে। এছাড়া, এসব দেশ ও অঞ্চলসমূহের কোনো কোম্পানির সঙ্গে যদি রুশ কোনো কোম্পানি বাণিজ্যিক চুক্তি করতে চায়, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রুশ কোম্পনিকে অবশ্যই সরকারের অনুমোদন নিতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ডিক্রিতে।
বিবৃতি অনুযায়ী, এই তালিকায় আছে আলবেনিয়া, অ্যান্ডোরা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্সি, অ্যাংগিলা, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, জিব্রালটার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র, আইসল্যান্ড, কানাডা, লিখটেনস্টেইন, মাইক্রোনেশিয়া, মোনাকো, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, স্যান মারিনো, উত্তর মেসিডোনিয়া, সিংগাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান (চীনের একটি অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত, কিন্তু ১৯৪৯ সাল থেকে তার নিজস্ব প্রশাসন দ্বারা শাসিত), ইউক্রেন, মন্টিনেগ্রো, সুইজারল্যান্ড এবং জাপান।
এভাবে দেনা পরিশোধের জন্য যে কোনো রাশিয়ান ব্যাংকে একটি বিশেষ ধরনের রুবল অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তারপর সেখানে বিদেশি মুদ্রার ওই দিনের আনুষ্ঠানিক বিনিময় মূল্য অনুযায়ী সমপরিমাণ রুবল স্থানান্তর করতে হবে। তারপর পেমেন্ট সম্পন্ন হবে।
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের এই সাময়িক ব্যবস্থা শুধুমাত্র মাসে ১ কোটি রুবল (৭৬ হাজার ডলার) বা তার চেয়ে বেশি পেমেন্টের জন্য প্রযোজ্য হবে।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানে বিশ্বব্যাপী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এবং রাশিয়াকে আক্রমণ থেকে বিরত রাখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করা সংস্থা ক্যাস্টেলাম ডট এআই মার্কিন বার্তাসংস্থা ব্লুমবার্গকে জানিয়েছে, বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে রাশিয়া অন্যতম।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে গত ১৩ দিনে দেশটির বিরুদ্ধে জারি ২ হাজার ৭৭৮টি নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
এর ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক মোট নিষেধাজ্ঞার সংখ্যা এখন ৫ হাজার ৫৩০। ক্যাস্টেলাম ডট এআইয়ের এ তালিকায় রাশিয়ার পরেই অবস্থান করছে ইরান। দেশটির ওপর মোট ৩ হাজার ৬১৬টি নিষেধাজ্ঞা আছে। ২ হাজার ৬০৮ টি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ইরানের পরেই আছে রাশিয়ার অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র সিরিয়া; আর কিম জং উনের দেশ উত্তর কোরিয়া আছে চতুর্থ অবস্থানে। দেশটির ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞার মোট সংখ্যা ২ হাজার ৭৭।
প্রথম দিকে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা বিশ্বের আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা অথবা ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে মস্কোতে তেমন একটা প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। জীবন গতি স্বাভাবিকই চলছিলো । মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ তেমন লক্ষ্য করা যায়নি।
কিন্তু বিশ্বের ব্যাংক লেনদেনের ব্যবস্থা ‘সুইফট’ থেকে একের পর এক রুশ ব্যাংককে বহিষ্কার করা শুরু হলে মস্কোবাসীর মধ্যে বিশেষ উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেছে।
কেবল অর্থনৈতিকভাবেই রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। সামাজিক, সাংস্কৃতিক নানাভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এতো এতো নিষেধাজ্ঞা, যেন সারা পৃথিবী এক সাথে হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়াকে পৃথিবী থেকে যেন বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। একঘরে করে ফেলা হয়েছে।
ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান অনেক কিছুই এবার নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত। বলা যায় পুরো রাশিয়াকে পৃথিবী থেকে একঘরে করে ফেলা হয়েছে।