রহস্যময় ‘জেড’ চিহ্ন নিয়ে কৌতূহল

অনলাইন ডেস্ক, ৮ মার্চ।।ইউক্রেনে হামলায় ব্যবহৃত রাশিয়ার সামরিক যানের সবগুলোতেই ইংরেজি ‘জেড’ অক্ষর লেখা রয়েছে। এই অক্ষর বা চিহ্ন ঠিক কী কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে বা এটি দিয়ে কী বোঝানো হচ্ছে সেটি নিয়ে বিশ্বব্যাপী সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। কেবল সামরিক যানবাহনেই নয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনাদের এবং রুশপন্থীদের পোশাকেও রয়েছে এই ‘জেড’ চিহ্ন। রহস্যময় এই ‘জেড’ চিহ্ন নিয়ে কৌতূহল ছড়িয়েছে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে। প্রশ্ন হচ্ছে, এর অর্থ কী?

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যালিনা স্তারোভোইতোভা ফেলো কামিল গালিভের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- ইউক্রেনের উদ্দেশে রুশ সামরিক যানগুলো ছেড়ে যাওয়ার আগে সেগুলোতে ‘জেড’ চিহ্ন লিখে রাখা হচ্ছে। অনেকে আবার জেড চিহ্নকে ‘জা পোবেডি’ (বিজয়) হিসেবে উল্লেখ করছেন। অনেকে আবার এটিকে ‘জাপাড’ (পশ্চিম) বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে মনে করছেন।

কামিল গালিভ আরও বলেছেন, ‘মাত্র কয়েকদিন আগে উদ্ভাবিত এই প্রতীকটি নতুন রুশ আদর্শ ও জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে’।

অবশ্য রুশ এই প্রতীকের অনেক সমর্থক খুঁজে পাওয়া গেছে। রাশিয়ার অনেক বেসামরিক নাগরিক এবং ব্যবসায়ীরা স্বেচ্ছায় তাদের গাড়িতে ‘জেড’ চিহ্ন ব্যবহার করা শুরু করেছেন।

অবশ্য পর্যবেক্ষকদের অনেকেই আবার বলছেন যে, এই ধরনের চিহ্নগুলো রুশ সহযোদ্ধাদের যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব যানবাহন শনাক্ত করতে এবং ফ্রেন্ডলি ফায়ার এড়াতে সংকেত হিসেবে কাজ করে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি রুশ সামরিক যানগুলো ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলে প্রবেশ করার পর সেগুলোর গায়ে প্রথম ‘জেড’ প্রতীকটি দেখা যায়। বেশ কিছু টুইটে দাবি করা হয়েছে যে, সামরিক বাহিনীর পদাতিক ইউনিটকে বোঝাতেই এই চিহ্নটি ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে।

অবশ্য রুশ সামরিক যানে জেড প্রতীকের ব্যবহার এবারই প্রথম নয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের সময়ও রুশ সামরিক যানগুলোর গায়ে ‘জেড’ চিহ্ন দেখা গিয়েছিল।

সংবাদমাধ্যম বলছে, যেকোনো যুদ্ধের সময়েই কিছু সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এই সব সংকেতের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে হামলা পরিচালনা করতে পারে সামরিক বাহিনী।

মূলত, যুদ্ধক্ষেত্রে কোন পথ দিয়ে যেতে হবে, মুখোমুখি পড়ে যাওয়া ট্যাংক নিজের দেশের নাকি শত্রুপক্ষের, কোন ধরনের চিহ্ন দেখলেই আঘাত হানতে হবে, এসব বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের এমন সংকেত যুদ্ধে বরাবরই কার্যকর।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা আজ ১৩তম দিনে গড়িয়েছে। গতকাল থেকেই দেশটির রাজধানী কিয়েভে সর্বাত্মক হামলার জন্য রুশ বাহিনী প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। কিয়েভ শহরে হামলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম জড়ো করতে শুরু করেছে মস্কো বাহিনী। রাজধানী কিয়েভের শহরতলি ইরপিনে রুশ সৈন্যরা ক্রমাগত বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। শহরের প্রশাসন জানিয়েছে, নদীর ওপর বানানো অস্থায়ী সেতু দিয়ে ২০০০ মানুষ শহর ছেড়ে চলে যেতে সক্ষম হয়েছে।

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ এবং বন্দরনগরী মারিওপোলেও তীব্র লড়াই চলছে। খারকিভে আরও এক শীর্ষস্থানীয় রুশ জেনারেলকে হত্যার দাবি করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী।

ইউক্রেনের যোদ্ধারা ১১ হাজার রুশ সেনাকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। অবশ্য রাশিয়া তাদের প্রায় ৫০০ সেনা নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে। তবে কোনো পক্ষই ইউক্রেনের যোদ্ধাদের হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করেনি।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *