স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৭ মার্চ।। রাজ্যকে পরনির্ভরশীলতা থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করতে হলে রাজ্যের মহিলাদের স্বশক্তিকরণ করা খুবই প্রয়োজন। স্বশক্তিকরণের জন্য মহিলাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করতে হবে। তাই মহিলা ক্ষমতায়ন ও স্বশক্তিকরণের লক্ষ্যে বর্তমান রাজ্য সরকার শুরু থেকেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে।
আজ মুক্তধারা হলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় মহিলা সংসদ বিষয়ক এক কর্মশালার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বশক্তিকরণ করা হলে রাজ্য যেমন এগিয়ে যাবে তেমনি গার্হস্থ্য হিংসাও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। পাশাপাশি সমাজে আর্থিক বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে।
বর্তমান রাজ্য সরকার মহিলা ক্ষমতায়ন ও স্বশক্তিকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্প সফল বাস্তবায়নের ফলে রাজ্যে এখন কন্যা ভ্রুণ হত্যা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে দেখা গেছে রাজ্যে মহিলা পুরুষের অনুপাত হ্রাসের মাধ্যমে সমতা সুনিশ্চিত হচ্ছে। রাজ্য সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সন্তান প্রসব ব্যবস্থাকে উৎসাহ প্রদানের ফলে দেখা গেছে রাজ্যে বর্তমানে ৯৮ শতাংশ মহিলাই সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালে যাচ্ছেন। এরফলে রাজ্যে শিশু ও মা-র মৃত্যুর হার অনেক কমেছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মহিলাদের স্বশক্তিকরণের জন্য শুধু কথা বললেই হবে না, তা বাস্তবেও করে দেখাতে হয়। বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিকল্পনা তৈরি করেছে। এরফলে রাজ্যের প্রান্তিক এলাকার জনগণও এখন স্বচ্ছতার সঙ্গে উন্নত নাগরিক পরিষেবা পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই আরক্ষা দপ্তরে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করেছে। সম্প্রতি টিএসআর নিয়োগে প্রথমবারের মতো ১০ শতাংশ মহিলা নিযুক্ত হয়েছেন। ফলে এখন রাজ্যের মহিলাদের মধ্যে সরকারের স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর ভরসা জেগেছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে গৃহিত একাধিক ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় একের পর এক সাফল্য আসছে। রাজ্যেই এখন বিভিন্ন ধরনের জটিল অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার মহিলাদের রোজগারের সুযোগ বৃদ্ধি করতে স্বসহায়ক দল গঠনে উৎসাহ প্রদান করছে।
রাজ্যে বর্তমানে ৩৬-৩৮ হাজারের মতো স্বসহায়ক দল রয়েছে। এই স্বসহায়ক দলগুলিতে মহিলা সদস্য রয়েছে পৌনে ৩ লক্ষের মতো। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিলো রেশনিং ব্যবস্থাকে অনলাইনের মাধ্যমে যুক্ত করা। ফলে এখন প্রকৃত ভোক্তারাই তাদের সামগ্রী রেশন থেকে সংগ্রহ করতে পারছেন।
অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা তার ভাষণে বলেন, রাজ্যের মহিলাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নতিকল্পে সমাজকল্যাণ সমাজশিক্ষা দপ্তর বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করছে। এই প্রকল্পগুলি সম্পর্কে রাজ্যের মহিলাদের আরও বেশি করে সচেতন করার প্রয়াস নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা সরকার দেব, রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল সিদ্ধার্থ শঙ্কর দে, ত্রিপুরা রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বর্ণালী গোস্বামী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ১০ জন মহিলাকে ভূবনেশ্বরী মাতৃ সম্মাননা, ২০২২ প্রদান করা হয়।