রাশিয়ান সেনাদের ওপর বিভিন্ন জায়গায় ইউক্রেনের সেনাদের হামলা

অনলাইন ডেস্ক, ৫ মার্চ।। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে মাত্র ১৫ মাইল দূরে অবস্থান করছে রাশিয়ার ৪০ মাইল দীর্ঘ সেই সেনা বহর। রাশিয়ার এই সামরিক বহর আজ সহ ৬ দিন ধরে কিয়েভ অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো শহরটিতে পৌঁছাতে পারেনি।

রাজধানী কিয়েভ থেকে ৩০ মাইল দূরে অবস্থিত তেতেরিভ নদীর ওপর থাকা একটি ব্রিজ ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর সেনারা ধ্বংস করে দেওয়ায় রাশিয়ার সেনা বহরের গতি থমকে গেছে। রাশিয়ান সেনারা ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পরপরই অবস্থার ভয়াবহতা বুঝতে পেরে ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্রিজটি উড়িয়ে দেয় ইউক্রেন সেনারা।

আর এ ব্রিজটি ধ্বংস করে দেওয়ার কারণেই রাশিয়ানরা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কিয়েভের দিকে আগাতে পারেনি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা।

তাছাড়া রাশিয়ান সেনাদের ওপর বিভিন্ন জায়গায় ইউক্রেনের সেনাদের হামলার কারণেও রাশিয়ার খুব বেশি দূর আগাতে পারেনি বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা

ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্রিজ, সরাসরি আক্রমণের পাশাপাশি জ্বালানি ও খাবারের সংকটও রাশিয়ানদের অগ্রসর থামিয়ে দিয়েছে।

রাজধানী কিয়েভ থেকে বর্তমানে ১৫ মাইল দূরে অবস্থান করছে রাশিয়ার ৪০ মাইল দীর্ঘ সামরিক বহরটি।

রাশিয়ান সামরিক বহর নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দারা জানায়, আমরা বিশ্বাস করি ইউক্রেনীয়দের উড়িয়ে দেওয়া সেই ব্রিজ রাশিয়ানদের বহরের গতি থামিয়ে ও কমিয়ে দিয়েছে। তবে আমরা বিশ্বাস করি তারা বিভিন্ন জায়গায় এই বহরে সরাসরি হামলাও করেছে।

তবে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা বহর নিয়ে থেমে যাওয়ার পর রাশিয়া এখন তাদের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার সুযোগ পাচ্ছে এবং পুনরায় নতুন কৌশলে একত্রিত হচ্ছে। এবার তারা হয়তো আরও নৃশংস কোনো পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাবে।

কিন্তু ইউক্রেনের বিমান বাহিনী এখনো রুশ সেনা বহরের ওপর বড় কোনো হামলা চালায়নি। প্রশ্ন উঠেছে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী কেন এমন নিষ্ক্রিয়তা দেখাচ্ছে?

এর বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা রয়েছে। বেশি হামলা চালালে ইউক্রেনের সশস্ত্র ড্রোন ফুরিয়ে যেতে পারে। এবং এর ছোট ও স্বল্পসংখ্যক সেনার বিমান বাহিনী রাশিয়ান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থার ভয়েও সতর্ক হয়ে থাকতে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস) এর বেন ব্যারি বলেন, রুশ সেনারা কিয়েভে হামলা করলে পাল্টা আক্রমণের জন্য ইউক্রেন তাদের যুদ্ধ সরঞ্জাম সঞ্চয় করছে। এখনই ফুরিয়ে যেতে চাইছে না।

ইউক্রেনের কাছে রয়েছে বের‌্যাকটার টিবি-২ নামে অত্যাধুনিক এবং ঘাতক ড্রোন। ইউক্রেন এই ড্রোন কিনেছে তুরস্ক থেকে। ২০২০ সালের নভেম্বরে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে এই ড্রোন ব্যবহার করে আজারবাইজান তাদের সামরিকবাহিনীকে তছনছ করে দিয়েছিল। ওই যুদ্ধে দারুণ সাফল্য এনে দিয়েছিল এই ড্রোন।

কিন্তু এবার প্রতিপক্ষ রাশিয়া। যাদের বিপুল সামরিক ক্ষমতা। অত্যাধুনিক সমরসজ্জা। ফলে প্রেক্ষিতটাও অনেকটাই আলাদা। রাশিয়ার সেনা বহরে এই ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে একক ভাবে যে সাফল্য এনে দিয়েছিল এই ড্রোন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কি তা পারবে?

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ আজ শনিবার দশম দিনে গড়িয়েছে এবং দুপক্ষের দ্বিতীয় দফা আলোচনাতেও কোন সমঝোতা হয়নি। আবার বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ বন্ধের দাবি জোরালো হলেও তার দিকেও ভ্রুক্ষেপ নেই কোন পক্ষেরই।

বরং একদিকে কিয়েভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে রুশ বাহিনী আবার অন্যদিকে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের ব্যাপক সহায়তায় তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে ইউক্রেনীয়রা।

গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি এ যুদ্ধের সূচনা করেছিলো রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন ইউক্রেনকে নেটোতে যোগদান থেকে বিরত রাখা ও দেশটিকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করাই তার লক্ষ্য।

যদিও ইউক্রেনে হামলার পর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বলছে মিস্টার পুতিন সোভিয়েত সাম্রাজ্য ফিরত পেতে চান।

চলমান যুদ্ধে রাশিয়াকে ঠেকাতে ইউক্রেনকে ব্যাপক সামরিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের মিত্ররা। ন্যাটোতে যোগ না দিয়েও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ন্যাটোর সব ধরণের সমরাস্ত্র ও গোয়েন্দা সহযোগিতা পাচ্ছে ইউক্রেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশ্য বলেছেন যুদ্ধ বন্ধ করতে তিনি সরাসরি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা করতে চান।

যদিও রাশিয়ানদের তরফ থেকে এ বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া আসেনি। মিস্টার পুতিন শুধু বলেছেন ইউক্রেনে সাফল্য অর্জনই তার লক্ষ্য।

ইউক্রেনের একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গাকে কব্জা করতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হানা চালিয়েই যাচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেনে অবস্থিত ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্র আক্রমণ করার পর পুতিন-সেনার লক্ষ্য এ বার তাদের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর মারিওপোল।

শনিবার মারিয়োপোলের মেয়র জানান, দিন কয়েক ধরে প্রবল আক্রমণ হচ্ছে বন্দরে। ইউক্রেন সেনাও প্রতিরোধ করছে। ইউক্রেনর দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভেও কয়েকদিন ধরে ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়েছে রুশ সেনারা। ইতিমধ্যেই অবশ্য ইউক্রেনের পাঁচটি শহর দখল করে নিয়েছে রাশিয়া।

 

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *