অনলাইন ডেস্ক, ২ মার্চ।। অমানবাধিকার সংগঠন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত অভিযোগ করেছেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ভ্যাকিউম বা থারমোব্যারিক বোমা ব্যবহার করেছে। বলা হয় বিস্ফোরক দিয়ে তৈরি বোমার চেয়েও মারাত্মক বিধ্বংসী এই ভ্যাকিউম বোমা।
সোমবার সুমি অঞ্চলে বিস্ফোরণে যে তেল পরিশোধনাগার বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানে এই ভ্যাকিউম বোমা ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও নিরপেক্ষ কোন সূত্র থেকে বিবিসি তা যাচাই করতে পারেনি।
যেভাবে কাজ করে ভ্যাকিউম বোমা:
ভ্যাকিউম বোমা বা থারমোব্যারিক বোমা অ্যারোসল বোমা হিসেবেও পরিচিত। এতে থাকে একটি জ্বালানি তেলের কন্টেইনার এবং দুটি বিস্ফোরক চার্জার।
এই বোমা দুই ধাপে কাজ করে। প্রথম ধাপের বিস্ফোরণে মেঘের মতো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে জ্বালানি তেল।
দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে, এই জ্বালানি তেলের মেঘ আবার বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের গোলার মতো তৈরি হয়, বড় ধরনের শক ওয়েভ বা শব্দ তরঙ্গের ধাক্কা তৈরি করে এবং আশপাশের সব অক্সিজেন শুষে নেয়।
রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউটের গবেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বলছেন, ‘সাধারণ বিস্ফোরকে ৩০ শতাংশ জ্বালানি তেল থাকে আর ৭০ শতাংশ থাকে অক্সিডাইজার। কিন্তু থারমোব্যারিক বোমায় শুধু জ্বালানি তেল থাকে যা বাতাস থেকে সব অক্সিজেন শুষে নেয়। কিছু ওয়ারহেডের চেয়েও এটি অনেক বেশি শক্তিশালী’।
এই বোমা রকেট আকারে নিক্ষেপ করা যায় অথবা বিমান থেকে ফেলা যায়। এটি বিভিন্ন আকারের হতে পারে। যেমন হয়ত একজন সেনার অবস্থান লক্ষ করে ছোঁড়ার মতো হাতে বহনকারী, আবার রকেট লঞ্চার দিয়ে নিক্ষেপ করা যায় এমন।
এর প্রভাব কি?
ভ্যাকিউম বোমার ফলে যে ধরনের তাপ ও চাপ সৃষ্টি হয় তা ভয়ঙ্কর। এর একদম মাঝখানে যারা পড়বে তারা নিমিষেই বাষ্পের মতো উবে যাবে।
আর এর আশপাশে যারা থাকবে শব্দ তরঙ্গের ধাক্কায় তাদের শরীরের ভেতরের অঙ্গে বড় ধরনের আঘাত পাবে।
‘এই বোমায় মৃত্যু হয় মূলত এর কারণে ফুসফুস বা এরকম অভ্যন্তরীণ অন্যান্য অঙ্গ শরীরের ভেতরেই ফেটে চুরমার হয়ে যায়’, বলছিলেন জাস্টিন ব্রঙ্ক।
‘বদ্ধ যায়গায় শব্দ তরঙ্গ আরও বড় আকার ধারণ করে। তাই যারা বদ্ধ কোনো প্রকোষ্ঠে লুকিয়ে আছেন তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে বিধ্বংসী। এই বোমা কয়েক হাজার ডিগ্রির উচ্চ তাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে শরীর ভয়াবহভাবে দগ্ধ হয়’।
রাশিয়া কি ইউক্রেনে এই বোমা ব্যবহার করেছে?
ইউক্রেনের তরফ থেকে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে, যা বিবিসি নিরপেক্ষ কোন সূত্র থেকে যাচাই করতে পারেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের সাথে এক বৈঠকের পর ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওকসানা মারকারোভা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রাশিয়া আজ ভ্যাকিউম বোমা ব্যাবহার করেছে। রাশিয়া ইউক্রেনে যে ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর চেষ্টা করছে তা ভয়াবহ’।
ইউক্রেনের সীমান্তে অবস্থানকারী সিএনএন-এর একজন সংবাদদাতার ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে রাশিয়ার বেলগরদ শহরে টিওএস-ওয়ান নামে এক ধরনের রকেট লঞ্চার বহনকারী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যা থারমোব্যারিক বোমা বহন ও নিক্ষেপে ব্যবহার করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও এই ধরনের ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে। টুইটারে এমনকি ভ্যাকিউম বোমার বিস্ফোরণের ফুটেজও পাওয়া যাচ্ছে। তবে এর কোনটিই নিরপেক্ষ সূত্র থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
আর কোথায় এর ব্যবহার হয়েছে?
১৯৬০-এর দশক থেকে রাশিয়া ও পশ্চিমা বাহিনী ভ্যাকিউম বোমা ব্যবহার করেছে। আফগানিস্তানে গুহার মধ্যে অবস্থান নেয়া আল-কায়েদা যোদ্ধাদের আক্রমণে মার্কিন বাহিনী এই বোমা ব্যাবহার করেছে।
২০০০ সালে রাশিয়া চেচনিয়াতে এই বোমা ব্যাবহার করেছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সমালোচনা করেছে।
সর্বশেষ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, সিরিয়াতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপরে হামলায় রুশ এবং সরকারি বাহিনী এই বোমা ব্যবহার করেছে।
ইউক্রেনের শহরাঞ্চলে যদি ভ্যাকিউম বোমা ব্যাবহার করা হয় তাহলে সেখানে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের সংখ্যা হবে মারাত্মক ভয়াবহ।